তাফসীরে কুরআন ১

তাফসীরে কুরআন ১   সূরা বাক্বারা : আয়াত নং- ১-১০  (কানযুল ঈমান ও খাযাইনুল ইরফান থেকে)


সূরা বাক্বারা : আয়াত নং- ১-১০
(কানযুল ঈমান ও খাযাইনুল ইরফান থেকে)

______________♥♥____________


بِسۡمِ اللّٰهِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ


________


অনুবাদ:


আল্লাহর নামে আরম্ভ, যিনি পরম দয়ালু করুণাময়(১)

________


টীকা-১ঃ সূরা বাক্বারাঃ এ সূরা ‘মাদানী’। হযরত ইবনে আব্বাস رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُمَا বর্ণনা করেছেন, মাদীনা শরীফে সর্বপ্রথম এ সূরাই অবতীর্ণ হয়েছে; তবে وَتَّقُوۡا یَوۡمًا تُرۡجَعُوۡنَ  الایّة বিদায় হজ্জের সময় মক্কা মুকাররমায় নাযিল হয়েছে। (তাফসীরে-ই-খাযিন) 


এ সূরায় ২৮৬ টি আয়াত, ৪০ টি রুকূ’, ৬,১২১টি পদ এবং ২৫,৫০০টি বর্ণ আছে। (তাফসীরে-ই-খাযিন) 


প্রাথমিক যুগে ক্বুরআন শরীফে সূরাগুলোর নাম লিখা হতো না। নাম লিখার এ নিয়ম (পদ্ধতি) হাজ্জাজ ইবনে য়ূসুফই প্রবর্তন করেন। 


হযরত ইবনুল আরাবীর বর্ণনানুযায়ী, সূরা বাক্বারায় ১০০০ নির্দেশ, ১০০০ নিষেধ, ১০০০ বিধি-বিধান এবং ১০০০ বিবরণী রয়েছে। সেগুলো মোতাবেক আমল করায় বরকত এবং প্রত্যাখ্যানে অনুশোচনা অবধারিত। এ গুলোর উপর কোন বাতিলপন্থী কিংবা যাদুকরের কোন ক্ষমতা নেই। 


যে ঘরে এ সূরা পাঠ করা হয় তিন দিন পর্যন্ত অবাধ্য শয়তান সে ঘরে প্রবেশ করে না। মুসলিম শরীফের হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-শয়তান ঐ ঘর থেকে পলায়ন করে, যেখানে এ সূরা পাঠ করা হয়- (তাফসীরে জুমাল)।


ইমাম বায়হাক্বী এবং সা’ঈদ ইবনে মানসূর হযরত মুগীরা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, যে ব্যক্তি নিদ্রার প্রাক্কালে সূরা বাক্বারার ১০ টা আয়াত পাঠ করবে সে কখনো ক্বুরআন শরীফ ভুলবেনা। সে আয়াতগুলো হচ্ছে- এ সূরার প্রথম চার আয়াত, আয়াতুল কুরসী ও তদ্সংলগ্ন দু’আয়াত এবং সূরার শেষ তিনটি আয়াত। 


মাসআলা : ইমাম তাবরানী ও ইমাম বায়হাক্বী হযরত ইবনে ওমর رَضِيَ اللّٰهُ  تَعَالٰی عَنۡهُ থেকে বর্ণনা করেন- হুযূর  عَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام ইরশাদ করেন,“মৃত ব্যক্তিকে কবরে দাফন করার পর কবরের শির-প্রান্ত সূরা বাক্বারার প্রথম তিন আয়াত এবং পদ-প্রান্তে শেষের আয়াতগুলো পাঠ করো।” 


শানে নুযূলঃ আল্লাহ تَعَالٰی তাঁর হাবীব صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর এমন এক কিতাব নাযিল করার ওয়াদা দিয়েছিলেন, যাকে না পানি দ্বারা ধূয়ে নিশ্চিহ্ন করা যাবে, না তা জীর্ণ-শীর্ণ হবে। যখন ক্বুরআন পাক নাযিল হলো তখন ইরশাদ করলেন- ذٰلِکَ  الۡکِتٰبُ (যালিকাল কিতাবু) অর্থাৎ ‘এটা হচ্ছে সেই প্রতিশ্রুত কিতাব।’ (অন্য) একটা অভিমত হলো- আল্লাহ تَعَالٰی বানী ইস্রাঈলের প্রতি একটা কিতাব নাযিল করার এবং হযরত ইসমাঈল عَلَیۡهِ السَّلَام এর বংশধরদের মধ্য থেকে একজন নাবী প্রেরণের ওয়াদা দিয়েছিলেন। যখন নাবী কারীম صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم মাদীনা শরীফে হিজরত করলেন, যেখানে বহু সংখ্যক ইহুদী বসবাস করতো, তখন ‘আলিফ-লাম-মীম, যালিকাল কিতাবু’ (সূরা বাক্বারা) নাযিল করে উক্ত ওয়াদা পূরণের সংবাদ দিলেন। (তাফসীরে-ই-খাযিন)



আয়াত নং- ০১

________


অনুবাদ:


০১: আলিফ-লাম-মীম (২)

________


টীকা-২ঃ الٓـمّٓ  (আলিফ-লাম-মীম): সূরাগুলোর প্রারম্ভে যে ‘হরু,ফে মুক্বাত্তা‘আত’ বা বিচ্ছিন্ন (একক) বর্ণসমূহ উল্লেখ করা হয়, সেগুলো সম্পর্কে অধিকতর গ্রহণযোগ্য অভিমত হচ্ছে-এগুলো আল্লাহর রহস্যাবলী ও বহু অর্থবোধক বর্ণ সমষ্টি। এগুলোর প্রকৃত অর্থ আল্লাহ ও তাঁর রসূল صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ই জানেন।আমরা শুধু এগুলোর সত্যতার উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখি।



আয়াত নং- ০২

________


অনুবাদ:


০২ঃ সে-ই উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন কিতাব (ক্বুরআন) কোন সন্দেহের ক্ষেত্রে নয়  (৩)। তাতে হিদায়ত রয়েছে খোদাভীতি সম্পন্নদের জন্য (৪)

________


টীকা-৩ঃ لَا رَیۡبَ ۚۖۛ فِیۡہِ (লা রাইবা ফীহি) (অর্থাৎ ক্বুরআন সন্দেহের ক্ষেত্র নয়।) কারণ, সন্দেহ তাতেই হয়, যার পক্ষে দলীল নেই। ক্বুরআন পাক এমন সুস্পষ্ট ও অকাট্য প্রমাণাদি সম্বলিত কিতাব, যেগুলো প্রতিটি সুবিবেচক বিবেকবান ব্যক্তিকে, এটা আল্লাহর কিতাব এবং নিরেট সত্য হওয়ায় বিশ্বাস স্থাপনে বাধ্য করে। কাজেই, এ কিতাব কোন প্রকারের সন্দেহযোগ্য নয়। অন্ধ ব্যক্তির অস্বীকারের ফলে যেমন সূর্যের অস্তিত্বে কোন প্রকার সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে না, তেমনি একগুঁয়ে এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন অন্তরের সংশয় ও অস্বীকারের কারণে এ মহান কিতাব সামন্যতম সন্দেহযুক্তও হতে পারে না। 



টীকা-৪ঃ

______


(হুদাল্লিল মুত্তাক্বীন): যদিও ক্বুরআন কারীমের হিদায়াত প্রতিটি পাঠক ও গবেষকের জন্যই ব্যাপকভাবে প্রযোজ্য- সে মু’মিন হোক কিংবা কাফির; যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন  هُدًی لِّلنَّاسِ (হুদাল্লিন্নাস, অর্থাৎ এ পবিত্র ক্বুরআন সমস্ত মানব জাতির জন্যই সাধারণভাবে পথ প্রদর্শক); কিন্তু যেহেতু পরহেয্গার বা খোদাভীরুরাই তা থেকে হিদায়াত গ্রহণ করে উপকৃত হন, সেহেতু ‘হুদাল্লিল মুত্তাক্বীন’ (অর্থাৎ ক্বুরআন খোদাভীরুদের জন্যই পথ প্রদর্শক) ইরশাদ হয়েছে। যেমন বলা হয়, “বৃষ্টি শাক-সব্জীর ক্ষেতের জন্য হয়।” (অর্থাৎ বৃষ্টি দ্বারা শাক- সব্জীর ক্ষেত ও গাছপালাই উপকৃত হয়ে থাকে;) যদিও বৃষ্টি বর্ষিত হয় মরুভূমি ও অনাবাদী জমির উপরও। 


তাক্বওয়াঃ এর কয়েকটা অর্থ হতে পারে। যথা- নিজেকে ভীতিপ্রদ বস্তু থেকে রক্ষা করা। শরীয়াতের পরিভাষায়, নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ পরিহার করে নিজেকে গুনাহ থেকে মুক্ত রাখা। হযরত ইবনে আব্বাস رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُمَا বর্ণনা করেছেন, মুত্তাক্বী সে ব্যক্তিই, যে শির্ক, গুনাহে কবিরাহ্ ও ফাহিসাহ্ (অশ্লীলতা) থেকে বিরত থাকে। কেউ কেউ বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজেকে অন্য কারো থেকে উত্তম মনে করেনা সেই হলো ‘মুত্তাক্বী’। কারো কারো মতে,তাক্বওয়া হলো- হারাম বস্তুসমূহ বর্জন করা এবং একান্ত করণীয় কার্যাদি সম্পন্ন করা। কোন কোন মুফাসসিরের মতে, পুনঃপুন পাপাচার ও ইবাদত-বন্দেগীর উপর অহংকার বজর্ন করাই তাক্বওয়া। কেউ কেউ বলেছেন, এটাই তাক্বওয়া যে, তোমার প্রভু তোমাকে সে স্থানে পাবেননা, যে স্থানটা তোমার জন্য তিনি নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। অন্য এক অভিমত হচ্ছে- তাক্বওয়া হুযূর  عَلَیۡهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَام ও সাহাবা رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُمۡ - এর অনুসরণেরই নাম- (খাযিন)। 


এ সমস্ত অর্থই পরস্পর সামঞ্জস্য রাখে এবং পরিণাম ও তাৎপর্যের পরিপ্রেক্ষিতে পরস্পর বিরোধী নয়। 


তাক্বওয়ার স্তরসমূহঃ তাক্বওয়ার স্তর অনেক। যথাঃ (১) সাধারণ লোকের তাক্বওয়া। তা হচ্ছে- ঈমান এনে কুফর থেকে বিরত থাকা, (২) মধ্যম স্তরের লোকের তাক্বওয়া। তা হচ্ছে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা এবং (৩) বিশেষ ব্যক্তিদের তাক্বওয়া। তা হচ্ছে ঐ সমস্ত জিনিস পরিহার করা, যেগুলো আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন করে। (জুমাল) 


হযরত অনুবাদক আ’লা হযরত (قُدِّسَ سِرُّهُ) উল্লেখ করেছেন-তাক্বওয়া সাত প্রকার। যথাঃ (১) কুফর থেকে বিরত থাকা। এটা আল্লাহর অনুগ্রহক্রমে, প্রত্যেক মুসলমানের মধ্যেই রয়েছে; (২) ভ্রান্ত আক্বাঈদ ও মতবাদ থেকে বেঁচে থাকা। এটা প্রত্যেক সুন্নীর মধ্যেই অর্জিত রয়েছে; (৩) প্রত্যেক ‘কবীরাহ গুনাহ্’ থেকে বিরত থাকা; (৪) ‘সগীরাহ’ বা ছোট-খাট গুনাহ্ থেকেও বিরত থাকা; (৫) সন্দেহযুক্ত বস্তু থেকে দূরে থাকা; (৬) রিপুর প্রবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকা এবং (৭) অন্যের প্রতি দৃষ্টিপাত না করা। এটা বিশেষ ব্যক্তিবর্গের পর্যায়। আর ক্বুরআনে আ’যীমে এ সাত পর্যায়ের লোকেরই হিদায়তকারী।



আয়াত নং- ৩

________


অনুবাদ:


০৩: তারাই, যারা না দেখে ঈমান আনে (৫), নামায কায়েম রাখে (৬) এবং আমার দেয় জীবিকা থেকে আমার পথে ব্যয় করে- (৭)

________


টীকা-৫ঃ الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡغَیۡبِ (আল্লাযীনা ইউ’মিনূনা বিল্ গায়বি): এখান থেকে مُفۡلِحُوۡنَ (মুফলিহূন) পর্যন্ত আয়াত সমুহ খাঁটি মু’মিনদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে, যাঁরা বাহ্যিক ও আন্তরিকভাবে ঈমানদার। এর পরবর্তী দু’টি আয়াত প্রকাশ্য কাফিরদের সম্পর্কে, যারা বাহ্যিক ও আন্তরিকভাবে কাফির। এর পরবর্তী وَ مِنَ النَّاسِ(ওয়া মিনাননা-সি) থেকে ১৩ টি আয়াত মুনাফিক্বদের সম্পর্কে অবতীর্ণ, যাদের অন্তরে রয়েছে ‘কুফর’; কিন্তু বাহ্যিকভাবে নিজেরা নিজেদেরকে মুসলমান হিসেবে প্রকাশ করে।(জুমাল)। 


গায়ব (غیب): শব্দটি مصدر (ক্রিয়ার ধাতুমূল)। এটা হয়ত اسم فاعل (ইসমে ফা-‘ইল) এর অর্থে ব্যবহৃত। এতদ্ভিত্তিতে, ‘গায়ব’ হলো, যা ইন্দ্রিয় শক্তি ও বুদ্ধি দ্বারা সুস্পষ্টরূপে উপলদ্ধি করা যায় না। এ ধরণের ‘গায়ব’ দু’প্রকার-


প্রথমতঃ সেই গায়ব, যার উপর কোন দলীল থাকে না। এ ধরণের গায়বকে ‘ইলমে গায়ব-ই-যাতী’ বলা হয়। عِنۡدَهٗ مَفَاتِحُ الۡغَیۡبِ لَا یَعۡلَمُهَا اِلَّا هُوَ [অর্থাৎ তাঁর (আল্লাহ) নিকটই অদৃশ্য জ্ঞানভান্ডার, তা তিনি ছাড়া অন্য কেউ জানে না] এ আয়াতে ঐ শ্রেণীর গায়বের কথাই বুঝানো হয়েছে। আর ঐ সমস্ত আয়াতের মধ্যে, যেগুলোতে ‘ইলমে গায়ব’ কে আল্লাহ ছাড়া অন্যান্যদের জন্য অস্বীকার করা হয়েছে, তাতে এ শ্রেণীরই ‘ইলমে গায়ব’ অর্থাৎ ‘যাতী’ (ذَاتِیۡ) ই উদ্দেশ্য। যার উপর কোন দলীল নেই। বস্তুতঃ এটা আল্লাহ্ এর জন্যই নির্দিষ্ট। 


দ্বিতীয়তঃ (ঐ গায়ব) যার উপর দলীল আছে। যেমন, বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা ও তাঁর গুণাবলী, নাবীগণ (عَلَیۡهِمُ السَّلَام) -এর নবূয়ত ও তদসম্পর্কীয় আহকাম,আল্লাহর বিধানসমূহ, শেষ দিবস (ক্বিয়ামত) ও এর অবস্থাসমূহ, হাশর-নশর, হিসাব-নিকাশ এবং প্রতিদান ইত্যাদির জ্ঞান, যার উপর দলীল রয়েছে এবং যা আল্লাহর শিক্ষাদান (ওহী) দ্বারা অর্জিত হয়। এখানে (আয়াত) এটাই উদ্দেশ্য। 


এ দ্বিতীয় প্রকারের গায়বের জ্ঞান ও আস্থা, যা ঈমানের সাথে সম্পর্কযুক্ত, প্রত্যেক মু’মিনেরই রয়েছে। যদি না থাকে, তাহলে সে ব্যক্তি মু’মিন হতে পারে না। আর আল্লাহ্ এর তাঁর নৈকট্যধন্য বান্দাগণ-নাবী ও ওলীগণের উপর যে সমস্ত অদৃশ্য জ্ঞানের দ্বার উন্মুক্ত করেন, তা ঐ প্রকারেরই ‘ইলমে গায়ব’। অথবা গায়ব শব্দটিকে معنی مصدری  বা ‘ক্রিয়াগত অর্থে’ ব্যবহার করা যায়। আর এমতাবস্থায়, হয়ত ‘গায়ব’- এর ‘সিলাহ’ (صله) مُؤۡمَنۡ بِهٖসাব্যস্থ হবে, নতুবা, “ب”- কে উহ্য শব্দ مُتَلَبِّسِیۡنَ এর সাথে সম্পর্কিত করে (یُؤۡمِنُونَ এর ضمیر থেকে) حال সাব্যস্থ হবে। প্রথমোক্ত ব্যাখ্যায়, আয়াতের অর্থ দাঁড়ায় - “যারা না দেখে ঈমান আনে।” যেমন হযরত অনুবাদক (আ’লা হযরত قُدِّسَ سِرُّهُ) অনুবাদ করেছেন। শেষোক্ত বর্ণনানুযায়ী, অর্থ হবে- “যারা মু’মিনদের পেছনে, অগোচরেও ঈমান আনে।” অর্থাৎ তাদের ঈমান মুনাফিক্বদের ন্যায় মু’মিনদেরকে দেখানোর জন্য নয়; বরং তারা আন্তরিকভাবে, অনুপস্থিত ও উপস্থিত- উভয় অবস্থায়ই ঈমানদার থাকে। ‘গায়ব’-এর অন্য ব্যাখ্যায়, ‘গায়ব’ শব্দ দ্বারা ‘অন্তর’ বুঝানো হয়েছে। তখন আয়াতের অর্থ দাঁড়ায়- “তারা মনে-প্রাণে ঈমান আনে”। (তাফসীরে জুমাল)


ঈমানঃ যে সমস্ত বিষয় সম্পর্কে হিদায়ত ও ইয়াক্বীন সহকারে, চুড়ান্তভাবে একথা সাব্যস্থ হয় যে,সেগুলো দ্বীন-ই-মুহাম্মদীরই অন্তর্ভুক্ত, সে সমস্ত বিষয়কে মেনে নেয়া, অন্তরের সাথে বিশ্বাস করা এবং মুখে স্বীকার করার নামই প্রকৃত ঈমান। আমল ঈমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। এ কারণেই یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡغَیۡبِ এর পর  وَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ ইরশাদ করেছেন।


টীকা-৬ঃ ‘নামায কায়েম রাখা’র অর্থ হচ্ছে- সর্বদা নিয়মিতভাবে নামায আদায় করে, নির্দ্ধারিত সময়ে যথারীতি নামাযের ‘আরকান’ পূর্ণরূপে পালন করে এবং নামাযের ফরয, সুন্নাত ও মুস্তাহাব কাজগুলো সতর্কতার সাথে সম্পন্ন করে, কোনটিতে সামান্যতম   ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটতে দেয়না, নামায ভঙ্গকারী কিংবা মাকরুহর কারণ হয় এমন সব কিছু থেকে নামাযকে মুক্ত রাখে এবং এর অপরিহার্য কার্যাদি যথাযথভাবে পালন করে। 


নামাযের অপরিহার্য কার্যাদি দু’প্রকার। যথা- (১) বাহ্যিক কার্যাবলী, যেগুলো পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে; আর (২) অপ্রকাশ্য বা অন্তরের কার্যাবলী। সেগুলো হচ্ছে- বিনয় ও নম্রতা সহকারে একাগ্রচিত্তে আল্লাহ تَعَالٰی এর দরবারে মনোনিবেশ করা এবং মুনাজাত-প্রার্থনায় আত্মনিয়োগ করা।


টীকা-৭ঃ ‘আল্লাহর পথে ব্যয় করা’র মানে হচ্ছে- হয়তঃ যাকাত প্রদান করা; যেমন অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে  وَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَیُؤۡتُوۡنَ الزَّكٰوةَ  (অর্থাৎ তারা নামায কায়েম রাখে এবং যাকাত প্রদান করে)। অথবা ‘সাধারণ ব্যয়’; তা ফরয হোক কিংবা ওয়াজিব; যেমন -যাকাত, মান্নত, নিজের এবং স্বীয় পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করা ইত্যাদি। কিংবা ‘মুস্তাহাব ব্যয়’; যেমন- নফল সাদাক্বাহ্সমূহ এবং মৃত ব্যক্তিদের রূহে ঈছালে সাওয়াবের জন্য অর্থ ব্যয় করা ইত্যাদি। 


মাসআলা : গেয়ারবী (একাদশ তারিখের আয়োজন), ফাতিহা-খানি, তীজাহ্ (মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর পর তৃতীয় দিবসে তার ঈছালে সাওয়াবের জন্য আয়োজন), চেহলাম (কারো মৃত্যুর চল্লিশতম দিবসের আয়োজন) ইত্যাদিও এর অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ এগুলোও নফল সাদাক্বাহ। ক্বুরআন পাক এবং কালিমা শরীফ পাঠ করা- সাওয়াবের কাজের সাথে অন্য সাওয়াবের কাজ মিলে প্রতিদান ও সাওয়াবকে বৃদ্ধি করে। 


মাসআলা : (و مِمَّا رَزَقۡنٰہُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ এর) " مِمَّا পদটির মধ্যে “من” হরফটা تبعیضیة (বা একাংশ নির্দেশক)। এ পদটা একথাই নির্দেশ করে যে, আল্লাহর পথে ব্যয় করতে গিয়ে অপব্যয় করা নিষিদ্ধ। অর্থাৎ সে ব্যয় নিজের জন্য হোক অথবা স্বীয় পরিবার-পরিজনের জন্য হোক, কিংবা অন্য কারো জন্য হোক, মধ্যম ধরণের হওয়া উচিত; অপব্যয় না হওয়া চাই।  رَزَقۡنٰہُمۡ বাক্যাংশটিতে (یُنۡفِقُوۡنَএর) পূর্বে উল্লেখ করে এবং رزق  (দান করা) ক্রিয়াটি আল্লহ তা’আলা নিজের সাথে সম্পর্কিত করে একথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ‘ধন-দৌলত তোমাদের সৃষ্ট নয়, (বরং) আমারই প্রদত্ত। এ‘কে যদি আমার নির্দেশে আমার পথে ব্যয় না করো, তবে তোমরা নিশ্চয়ই অত্যন্ত কৃপন প্রতিপন্ন হবে। আর এ কার্পণ্য বড়ই ঘৃণ্য।’



আয়াত নং- ০৪

________


অনুবাদ:


০৪ঃ এবং তারাই, যারা ঈমান আনে এর উপর যা, হে মাহবূব! আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা আপনার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে (৮) আর পরলোকের উপর নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে(৯)

________


টীকা-৮ঃ এ আয়াতে ‘আহলে কিতাব’ বলে সেসব মু’মিনের কথা বুঝানো হয়েছে, যারা নিজ কিতাব এবং পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানী কিতাব ও নাবীগণ عَلَیۡهِمُ السَّلَام এর প্রতি আগত ওহীর উপর ঈমান এনেছে এবং ক্বুরআন পাকের উপরও। আর مَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡکَ (মা উনযিলা ইলাইকা) দ্বারা সম্পূর্ণ ক্বুরআন পাক ও পূর্ণ শরীয়ত বুঝানো হয়েছে। (জুমাল) 


মাসআলা : ক্বুরআন পাকের উপর ঈমান আনা যেভাবে প্রত্যেক ‘শরীয়তের বিধি-নিষেধ পালনে আদিষ্ট ব্যক্তির উপর ফরয, তেমনি পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে বিশ্বাস স্থাপন করাও অপরিহার্য। আল্লাহ তাআ’লা হুযূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর পূর্ববর্তী নাবীগণের প্রতি যা নাযিল করেছেন, অবশ্য তন্মধ্যে যে সব বিধান আমাদের শরীয়তে রহিত হয়ে গেছে সেগুলোর উপর আ’মল করা জায়েয নয়; কিন্তু তাতে ঈমান রাখা বাঞ্ছনীয়। উদাহরণ স্বরূপ, পূর্ববর্তী শরীয়তগুলোতে ‘বায়তুল মুক্বাদ্দাস’ ‘ক্বিবলা’ ছিলো। এর উপর ঈমান আনা তো আমাদের উপর অপরিহার্য; কিন্তু তদনুযায়ী আমল করা, অর্থাৎ নামাযের মধ্যে বায়তুল মুক্বাদ্দাসের দিকে মুখ করে দাঁড়ানো জায়েয হবে না; (কারণ,) তা রহিত হয়ে গেছে।


মাসআলা : ক্বুরআন শরীফের পূর্বে যা কিছু আল্লাহ تَعَالٰی এর পক্ষ থেকে তাঁর নাবীগণ عَلَیۡهِمُ السَّلَام - এর প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, সেগুলোর উপর ‘মোটামুটিভাবে’ (اِجۡمَالًا) বিশ্বাস স্থাপন করা ‘ফরয-ই-আইন’ (অর্থাৎ প্রত্যেকের উপর ফরয) এবং ক্বুরআন শরীফের উপরও। বিস্তারিতভাবে ঈমান আনা ‘ফরয-ই-কিফায়াহ’। কাজেই, সাধারণ মুসলমানদের জন্য এর বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করা ফরয নয়, যখন তাদের মধ্যে এমনসব ‘আ’লিম’ বর্তমান থাকেন, যাঁরা ক্বুরআন শরীফের বিস্তারিত জ্ঞানার্জনে পূর্ণ প্রচেষ্টা ব্যয় করেছেন।


টীকা-৯ঃ অর্থাৎ ‘আখিরাত’ বা পরলোক এবং তাতে যা কিছু রয়েছে, যেমন- প্রতিদান ও হিসাব-নিকাশ ইত্যাদির উপর এমন দৃঢ় বিশ্বাস এবং আস্থা রাখে যে, তাতে বিন্দুমাত্রও সন্দেহ নেই। এতে আহলে কিতাব ও অন্যান্য কাফিরদের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে,যারা আখিরাত বা পরলোক সম্পর্কে ভ্রান্ত আক্বীদা পোষণ করে।



আয়াত নং- ০৫

________


অনুবাদ:


০৫ঃ সে সব লোক তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে হিদায়তের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং তারাই লক্ষ্যস্থলে পৌঁছবে।

________


আয়াত নং- ০৬

________


অনুবাদ:


০৬ঃ নিশ্চয় তারা, যাদের অদৃষ্টে কুফর রয়েছে (১০) তাদের জন্য সমান-চাই আপনি তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করুন কিংবা না-ই করুন। তারা ঈমান আনার নয়।

________


টীকা-১০ঃ ‘আউলিয়া’ বা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের পর শত্রুদের উল্লেখ করা হিদায়াতেরই অন্যতম হিকমত। কারণ, এ বিপরীতমুখী বর্ণনা থেকে প্রত্যেকের নিজ নিজ কৃতকর্মের প্রকৃতি ও তার পরিণতির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ হবে।


শানে নুযুলঃ এ আয়াত আবু জাহল ও আবূ লাহাব প্রমুখ কাফির সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে, যারা আল্লাহর জ্ঞানে, ঈমান থেকে বঞ্চিত। এ জন্যই তাদের বেলায় আল্লাহ تَعَالٰی এর বিরোধিতা থেকে ভীতি প্রদর্শন করা কিংবা না করা- উভয়ই সমান; তাদের ক্ষেত্রে তা ফলপ্রসূ হবে না। তবুও হুযূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর প্রচেষ্টা বৃথা যাবে না। কারণ, সাধারণতঃ রিসালাতের পদ-মর্যাদার দায়িত্ব হলো পথ প্রদর্শন করা, দলীল প্রতিষ্ঠা করা এবং পরিপূর্ণভাবে দ্বীনের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়া। 


মাসআলা : যদিও জনসাধারণ হিদায়ত গ্রহণ না করে তবুও পথপ্রদর্শক তাঁর পথপ্রদর্শনের সাওয়াব পাবেন। এ আয়াতে صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর এর পবিত্র অন্তরে সান্তনা দেয়া হয়েছে, যেন কাফিরগণ ঈমান গ্রহণ না করলেও তিনি মর্মাহত না হন। তাঁর প্রচেষ্টাই হচ্ছে দ্বীনের পরিপূর্ণ ‘দাওয়াত’ পৌঁছানো। এর প্রতিদান অবশ্যই মিলবে। বঞ্চিত তো ঐ হতভাগ্য লোকেরাই, যারা তাঁর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم আনুগত্য করে নি। 


কুফরঃ আল্লাহর অস্তিত্ব কিংবা তাঁর একত্ববাদ অথবা কোন নাবীর নবূয়ত কিংবা যে সমস্ত বিষয় দ্বীনের অঙ্গ হিসেবে সুস্পষ্ট, সে সব বিষয় থেকে কোন একটা বিষয়কে অস্বীকার করা অথবা এমন কোন কাজ করা, যা শরীয়ত মতে অস্বীকারেরই দলীল হয়-তাই ‘কুফর’।



আয়াত নং- ০৭

________


অনুবাদ:


০৭ঃ আল্লাহ তাদের অন্তরগুলোর উপর এবং কানগুলো উপর মোহর ছেপে দিয়েছেন। আর তাদের চোখের উপর কালো-ঠুলি (আবরণ) রয়েছে (১১) এবং তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি। (১২)

________


টীকা-১১ঃ সারকথা হলো-কাফিরেরা গোমরাহী বা পথভ্রষ্টতার মধ্যে এমনভাবে নিমজ্জিত যে, তারা সত্য দেখা, শুনা এবং বুঝা থেকে এমনিভাবে বঞ্চিত হয়ে গেছে যেমন কারো হৃদয় ও কানের উপর মোহর লেগেছে এবং চোখের উপর পর্দা ঢাকা পড়েছে। 


মাসআলা : এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, বান্দার কার্যাদিও আল্লাহর ক্ষমতার আয়ত্তাধীন।


টীকা-১২ঃ এতে বুঝা গেল যে, হিদায়াতের পথসমূহ প্রথম থেকেই তাদের জন্য বন্ধ ছিলো না, যাতে তারা কোন ওযর (অজুহাত) পেশ করার সুযোগ পেতো; বরং তাদের কুফর, গোঁড়ামী, অবাধ্যতা, অধার্মিকত, সত্যের বিরোধিতা এবং নাবীগণ عَلَیۡهِمُ السَّلَام এর প্রতি শত্রুতারই এটা পরিণাম। উদাহরণ স্বরূপ, যদি কেউ চিকিৎসকের বিরোধিতা করে আর প্রাণনাশক বিষ পান করে এবং তার জন্য ঔষধের মাধ্যমে উপকৃত হবার কোন উপায়ই না থাকে, তবে সে ব্যক্তিই তিরস্কারের উপযোগী।



আয়াত নং- ০৮

________


অনুবাদ:


০৮ঃ এবং কিছু লোক বলে (১৩), ‘আমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর ঈমান এনেছি।’ এবং (আসলে) তারা ঈমানদার নয়।

________


টীকা-১৩ঃ শানে নুযূলঃ এখান থেকে তেরটি আয়াত মুনাফিক্বদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে, যারা অন্তরের দিক দিয়ে কাফির ছিলো এবং নিজেদেরকে মুসলমান হিসেবে প্রকাশ করতো। আল্লাহ্ تَعَالٰی ইরশাদ করেছেন-(مَا هُمۡ بِمُؤۡمِنِیۡنَ ( “তারা ঈমানদার নয়।” অর্থাৎ মুখে কালিমা উচ্চারণ করে ইসলামের দাবীদার হওয়া ও নামায-রোযা পালন করা মু’মিন হবার জন্য যথেষ্ঠ নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত অন্তরে বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত না হয়।


মাসআলা : এ থেকে বুঝা গেলো যে, যতো ফির্কা বা সম্প্রদায় ঈমানের দাবী করে, কিন্তু কুফরী-আক্বীদা পোষণ করে তাদের সকলের বেলায় এ হুকুম প্রযোজ্য যে, তারা কাফির, ইসলাম বহির্ভুত। শরীয়তে এমন ব্যক্তিদেরকে বলা হয় ‘মুনাফিক্ব’। তাদের অনিষ্ট প্রকাশ্য কাফিরদের চেয়েও অধিক। مِنَ النَّاسِ (কিছু লোক) ইরশাদ করার সূক্ষ্ম রহস্য হচ্ছে- এ সম্প্রদায়টা প্রশংসনীয় গুণাবলী ও মানাবীয় পূর্ণতা থেকে এমনভাবে কূন্য যে, কোন সদগুণ-বাচক কিংবা সুন্দর শব্দ দ্বারা তাদের উল্লেখই করা যায়না। (শুধু) একথাই বলা যায় যে, তারাও মানুষ। 


মাসআলা : এ থেকে বুঝা গেলো যে, কাউকে ‘বশর’ (মানুষ) বললে তার মর্যাদা ও কামালাতের (পূর্ণতা) অস্বীকৃতির দিক প্রকাশ পায়। এ জন্যই ক্বুরআন মাজীদে বিভিন্ন স্থানে সম্মানিত নাবীগণ (عَلَیۡهِمُ السَّلَام) কে যারা ‘বশর’ বা (তাদের মতো)’ ‘মানুষ’ বলে, তাদেরকে কাফির বলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, নাবীগণ (عَلَیۡهِمُ السَّلَام) এর মর্যাদার ক্ষেত্রে এমন শব্দের ব্যবহার ‘আদব’ বা শালীনতার পরিপন্থী এবং কাফিরদেরই রীতি। 


কোন কোন তাফসীরকারক অভিমত প্রকাশ করেছেন,  'مِنَ النَّاسِ' শ্রেতাদেরকে আশ্চার্যান্বিত করার জন্যই ইরশাদ করা হয়েছ যে, এমনি প্রতারক, ধোকাবাজ এবং এমন নির্বোধও মানব জাতির মধ্যে রয়েছে!



আয়াত নং- ০৯

________


অনুবাদ:


০৯ঃ ধোকা দিতে চায় আল্লাহ তাআ’লা ও ঈমানদারদেরকে (১৪) এবং প্রকৃতপক্ষে, তারা ধোকা দিচ্ছে না, কিন্তু নিজেদের আত্মাকেই এবং তাদের অনুভূতি নেই।

________


টীকা-১৪ঃ আল্লাহ্ تَعَالٰی এ থেকে পবিত্র যে, তাঁকে কেউ ধোঁকা দিতে পারবে। তিনি সব রহস্য ও গোপনীয় বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ অবহিত। (আয়াতের) অর্থ হচ্ছে-

মুনাফিকরা নিজেদের ধারণায়, আল্লাহ্ تَعَالٰی কে প্রতারিত করতে চায়; অথবা এ যে,‘আল্লাহ্কে প্রতারিত করতে চায়’ মানে ‘তাঁর রসূলকে তারা প্রতারিত করতে চায়’। কেননা, তিনি صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم তাঁরই প্রতিনিধি। আর আল্লাহ্ আপন হাবীব صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم কে খোদায়ী রসস্যাদির জ্ঞান দান করেছেন। তিনি صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّمএসব মুনাফিক্বদের গোপনকৃত ‘কুফর’ সম্পর্কে অবগত এবং মুসলমানগণও তাঁর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم সংবাদদানের ফলে (সে সম্পর্কে) ওয়াকিফহাল। কাজেই, ঐ সব বে-দ্বীনের প্রতারণা না খোদার সাথে কার্যকর, না তাঁর রসূলের সাথে, না মু’মিনের সাথে বরং তারা প্রকৃতপক্ষে নিজেদেরকেই প্রতারিত করছে। 


মাসআলা : এ আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ‘দ্বিমুখী ভূমিকা’ (تَقِیَّهۡ) পালন করা (ভ্রান্ত বিশ্বাসকে অন্তরে গোপন করে সুবিধাবাদী পন্থা অবলম্বন করা।) অতীব দূষণীয়। যে মাযহাব বা মতবাদের বুনিয়াদ ‘দ্বিমুখী পলিসি’-এর উপর প্রতিষ্ঠিত সে মাযহাব বা মতবাদ বাতিল ও ভ্রান্ত। দ্বি-মুখী ভূমিকা পালনকারীদের অবস্থা নির্ভরযোগ্য নয়, তাওবাও সন্তোষজনক নয়। এজন্যই ওলামা কিরাম অভিমত প্রকাশ করেছেন 'لَا تُقۡبَلُ تَوۡبَةُ الزِّنۡدِیۡقِ' অর্থাৎ “মুনাফিক্বদের (দ্বি-মুখী ভূমিকা পালনকারীগণ) তাওবা গ্রহণযোগ্য নয়।"



আয়াত নং- ১০

________


অনুবাদ:


১০ঃ তাদের অন্তর গুলোতে ব্যাধি রয়েছে (১৫), অতঃপর আল্লাহ তাদের ব্যাধি আরো বৃদ্ধি করে দিয়েছেন এবং তাদের জন্য অবধারিত রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি, তাদের মিথ্যার পরিণামে।

_______


টীকা-১৫ঃ ভ্রান্ত আক্বীদা পোষণ করাকেই (আয়াতে) ‘অন্তরের ব্যাধি’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। এ থেকে বুঝা গেলো যে,ভ্রান্ত-আক্বীদা পোষণ করা ‘রুহানী জিন্দেগী’ (আত্মিক জীবন)- এর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। 


মাসআলা : এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হলো যে, মিথ্যা বলা হারাম। এর পরিনতি হচ্ছে কঠিন শাস্তি।





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ