সূরা বাক্বারা : আয়াত নং- ১১১-১২০
(কানযুল ঈমান ও খাযাইনুল ইরফান থেকে)
আয়াত নং- ১১১
________
অনুবাদ:
১১১ঃ এবং কিতাবীরা বললো, ‘নিশ্চয় জান্নাতে যাবে না, কিন্তু সেই-ব্যক্তি, যে ইহুদী কিংবা খৃষ্টান হবে (১৯৬)।’ এটা তাদের কল্পনাপ্রসূত আশা মাত্র। (হে হাবীব!) আপনি বলুন, ‘(তোমরা) পেশ করো স্বীয় প্রমাণ (১৯৭) যদি সত্যবাদী হও!’
________
টীকা-১৯৬ঃ অর্থাৎ ইহুদী সম্প্রদায় বলছে যে, জান্নাতে শুধু ইহুদীরাই দাখিল হবে, আর খৃষ্টানদের দাবী হচ্ছে শুধু খৃষ্টানরাই। বস্তুতঃ এসব কথা তারা মুসলমানদেরকে দ্বীন-ইসলাম থেকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বলে থাকে। যেমন, (আয়াত কিংবা হুকুম) রহিতকরণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে নিছক সন্দেহেগুলোকে তারা এ হীন আশায় পেশ করেছিলো যে, এতে মুসলমানদের মনে তাদের দ্বীন সম্পর্কে কিছুটা সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে। অনুরূপভাবে, তাদেরকে (মুসলমানগণকে) জান্নাত থেকেও নিরাশ করে ইসলাম থেকে ফেরানোর চেষ্টা করেছে। সুতরাং পারার শেষাংশে তাদের উক্তির উল্লেখ আছে- وَ قَالُوۡا کُوۡنُوۡا ہُوۡدًا اَوۡ نَصٰرٰی تَہۡتَدُوۡا ؕ [অর্থাৎ- ‘এবং তারা বললো, “তোমরা ইহুদী হও কিংবা খৃষ্টান হয়ে যাও! (তাহলে,) তোমরা হিদায়ত লাভ করবে।’] আল্লাহ্ تَعَالٰی তাদের এ ভিত্তিহীন কল্পনার খন্ডন করেছেন-
টীকা-১৯৭ঃ মাসআলাঃ এ আয়াত থেকে বুঝা গেলো যে, নেতিবাচক উক্তির দাবীদারের জন্যও প্রমাণ পেশ করা জরুরী। নতুবা, দাবী বাতিল ও অগ্রাহ্য হবে।
আয়াত নং- ১১২
________
অনুবাদ:
১১২ঃ হ্যাঁ, কেন (এমন) নয়? যে ব্যক্তি আপন চেহারা ঝুঁকিয়েছে আল্লাহর জন্য এবং সে হয় সৎকর্মপরায়ণ (১৯৮), তবে তার প্রতিদান তার প্রতিপালকের নিকট রয়েছে এবং তাদের না আছে কোন শংকা এবং না আছে কোন দুঃখ (১৯৯)
________
টীকা-১৯৮ঃ চাই সে যে কোন যামানার হোক, কিংবা যে কোন বংশের হোক অথবা যে কোন গোত্রের হোক।
টীকা-১৯৯ঃ এতে এ কথার ইঙ্গিত রয়েছে যে, ইহুদী ও খৃষ্টানদের এ দাবী- ‘জান্নাতের শুধু তারাই একক মালিক’, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কেননা, জান্নাতে প্রবেশাধিকারের পূর্ব শর্ত হচ্ছে- বিশুদ্ধ আক্বীদা এবং সৎকর্ম। এটা তাদের ভাগ্যে জোটেনি।
আয়াত নং- ১১৩
________
অনুবাদ:
১১৩ঃ এবং ইহুদীরা বললো, ‘খৃষ্টান কিছুই নয়।’ আর খৃষ্টান বললো, ‘ইহুদী কিছুই নয় (২০০)।’ অথচ তারা কিতাব পাঠ করে (২০১)। এভাবে মূর্খরা তাদের মতো কথা বলেছে (২০২)। সুতরাং আল্লাহ্ تَعَالٰی ক্বিয়ামত-দিবসে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেবেন যে বিষয়ে তারা ঝগড়া করছে।
________
টীকা-২০০ঃ শানে নুযূলঃ নাজরানের খৃষ্টান প্রতিনিধিগণ বিশ্বকুল সরদার হুযূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর দরবারে হাযির হলো। তারপর ইহুদী আলিমগণও আসলো। উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক আরম্ভ হলো। ইহুদীগণ বললো, “খৃষ্টানদের ধর্ম কিছুই নয়।”
তারা হযরত ঈসা (عَلَیۡهِ السَّلَام) ও ইঞ্জীলকে অস্বীকার করলো। অনুরূপভাবে, খৃষ্টানগণ ইহুদীদেরকে বললো, “তোমাদের ধর্ম কিছুই নয়।” আর তাওরীত ও হযরত মূসা (عَلَیۡهِ السَّلَام) কে অস্বীকার করলো। এ প্রসঙ্গে এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে।
টীকা-২০১ঃ অর্থাৎ জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও তারা এমন মুর্খসূলভ কথা বলছে; অথচ ইঞ্জীল, যাকে খৃষ্টানগণ মান্য করে, তাতে তাওরীত ও হযরত মূসা (عَلَیۡهِ السَّلَام) এর নাবূয়্যাতের স্বীকৃতি রয়েছে। অনুরূপভাবে,তাওরীত, যাকে ইহুদীগণ মান্য করে তাতে হযরত ঈসা (عَلَیۡهِ السَّلَام) এর নাবূয়্যাত ও ঐসব বিধি-নিষেধের স্বীকৃতি রয়েছে, যেগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁকে প্রদান করা হয়েছে।
টীকা-২০২ঃ কিতাবী আলিমদের ন্যায় ঐসব মূর্খ, যাদের না ছিলো জ্ঞান, না ছিলো কিতাব; যেমন- মূর্তি উপাসক ও অগ্নি পূজারী প্রমুখ; (তারা) প্রত্যেক ধর্ম-বিশ্বাসীকে অস্বীকার করতে আরম্ভ করলো আর বলতে লাগলো, “তারা কিছুই নয়।” এসব মূর্খদের মধ্যে আরবের অংশীবাদীরাও ছিলো, যারা নাবী কারীম (صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم) ও তাঁর প্রদত্ত দ্বীন-ইসলাম সম্পর্কে এ ধরণের মন্তব্য করেছিলো।
আয়াত নং- ১১৪
________
অনুবাদ:
১১৪ঃ এবং তার চেয়ে অধিক যালিম কে (২০৩),যে আল্লাহর মসজিদগুলোতে বাধা দেয় সেগুলোতে আল্লাহর নামের চর্চা হওয়া থেকে (২০৪), এবং সেগুলোর ধ্বংস সাধনে প্রয়াসী হয় (২০৫)? তাদের জন্য সঙ্গত ছিলো না যে, মসজিদসমূহে যাবে, কিন্তু ভয়-বিহ্বল হয়ে *। তাদের জন্য রয়েছে পৃথিবীতে লাঞ্ছনা (২০৬) এবং তাদের জন্য পরকালে রয়েছে মহাশাস্তি।
[*অর্থাৎ ভয়-বিহ্বল হওয়া ছাড়া মসজিদগুলোতে প্রবেশ করা তাদের জন্য সঙ্গত ছিলো না।]
________
টীকা-২০৩ঃ শানে নুযূলঃ এ আয়াত বায়তুল মুক্বাদ্দাসের অবমাননা প্রসঙ্গে নাযিল হয়েছে। এর সংক্ষিপ্ত ঘটনা হলো- রোমের খৃষ্টানগণ বানী ইস্রাঈলের বিরুদ্ধে সৈন্য প্রেরণ করলো। তারা এদের যুদ্ধক্ষম পুরুষদের হত্যা করলো। তাদের ছেলেমেয়েকে বন্ধী করলো। তাওরীত জ্বালিয়ে দিলো। আর বায়তুল মুক্বাদ্দাসের ধ্বংস সাধন করলো। তাতে অপবিত্র বস্তু নিক্ষেপ করলো, কূকর যবেহ করলো। (নাউযু বিল্লাহ!) বায়তুল মুক্বাদ্দাস হযরত ওমর ফারুক ( رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ) এর খিলাফতকাল পর্যন্ত এরূপ ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় ছিলো। তাঁর (হযরত ওমর رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ) বরকতময় শাসনামলে মুসলমানগণ এ পবিত্র ঘরের পুনঃনির্মান করলেন।
অন্য একটা অভিমত হচ্ছে- এ আয়াত শরীফ মক্কার অংশীবাদীদের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে, যারা ইসলামের প্রারম্ভিককালে বিশ্বকুল সরদার হুযূর (صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم) এবং তাঁর সাহাবীদেরকে কা’বা শরীফে নামায পড়তে বাধা দিয়েছিলো। হুদায়বিয়ার ঘটনার সময় এর মধ্যে নামায ও হজ্জ আদায়ে বাধা প্রদান করেছিলো।
টীকা-২০৪ঃ নামায, খোৎবা, তাসবীহ্, ওয়ায-নসীহত ও না’ত শরীফ- সবই যিকরের শামিল। আর আল্লাহর যিকরে বাধা দেয়া জঘণ্য অপরাধ-সর্বত্রই, বিশেষ করে, মসজিদগুলোতে, যেগুলো এ পূণ্যময় কাজের জন্যই নির্মান করা হয়।
মাসআলাঃ যে ব্যক্তি মসজিদকে যিকর ও নামাযের অযোগ্য করে দেয়, সে মসজিদের ধ্বংস সাধনকারী ও বড় অত্যাচারী।
টীকা-২০৫ঃ মাসআলাঃ মসজিদের ধ্বংস সাধন যেমন নামায ও যিকরে বাধা প্রদানের মধ্যে প্রকাশ পায়, তেমনি মসজিদ ভবনের ক্ষতি সাধন এবং এর অবমাননার মধ্যেও।
টীকা-২০৬ঃ পৃথিবীতে তাদের এ লাঞ্চনাই দেয়া হয় যে, তাদেরকে হত্যা করা হয়, গ্রেফতার করা হয় এবং মাতৃভূমি থেকে অন্যত্র বিতাড়িত করা হয়;হযরত ওমর ফারুক্ব ও ওসমান (رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُمَا) এর খিলাফতকালে সিরিয়া তাদের হাতছাড়া হয়ে যায় এবং বায়তুল মুক্বাদ্দাস থেকে অবমাননার সাথে বিতাড়িত হয়।
আয়াত নং- ১১৫
________
অনুবাদ:
১১৫ঃ এবং পূর্ব-পশ্চিম সব আল্লাহরই। সুতরাং তোমরা যে দিকে মুখ করো সেদিকেই ‘ওয়াজ্হুল্লাহ্’ (খোদার রহমত তোমাদের দিকে নিবদ্ধ হয়) (২০৭)। নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বব্যাপী সর্বজ্ঞ।
________
টীকা-২০৭ঃ শানে নুযূলঃ সাহাবা কিরাম রসূল কারীম (صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم) এর সাথে এক অন্ধকার রাতে সফরে ছিলেন। কা’বার দিক তাঁদের জানা ছিলো না। প্রত্যেকে যেদিকে নিজ নিজ অন্তর সাক্ষ্য দিয়েছিলো সেদিকে ফিরে নামায আদায় করলেন। ভোরে তাঁরা বিশ্বকুল সরদার হুযূর (صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم) এর দরবারে ঘটনা আরয করলেন। তখন আয়াত শরীফ নাযিল হলো।
মাসআলাঃ এ থেকে বুঝা গেলো যে, ক্বিবলা দিক স্থির করা সম্ভব না হলে যেদিকে ক্বিবলা বলে মনে বিশ্বাস জন্মে, সেদিকেই মুখ করে নামায পড়বে।
এ আয়াতের শানে নুযূল সম্পর্কে অন্য অভিমত হচ্ছে-এটা সেই মুসাফির সম্পর্কে নাযিল হয়েছে, যে যানবাহনের উপর নফল নামায পড়ে। যান যেদিকেই মুখ করবে সেদিকেই তার নামায দূরস্ত হবে। বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসসমূহ থেকে এ মাসআলা প্রমাণিত।
অন্য এক অভিমত হলো- যখন ক্বিবলা পরিবর্তনের আদেশ দেওয়া হলো, তখন ইহুদীরা মুসলমানদের সমালোচনা করলো। তাদের জবাবে এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, পূর্ব-পশ্চিম সব আল্লাহরই তিনি যেদিকে চান ক্বিবলা নির্ধারণ করবেন। এতে কারো আপত্তির কি অধিকার আছে? (খাযিন)
অন্য একটা অভিমত হলো এ আয়াত শরীফ দুআ’ সম্পর্কেই অবতীর্ণ হয়েছে। হুযূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم কে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘কোন দিকে মুখ করে দুআ’ করতে হবে।’ এর জবাবে এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে।
অন্য এক অভিমত হচ্ছে- এ আয়াত শরীফ সত্য থেকে পলায়ন সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়। আর اَیۡنَمَا تُوَلُّوۡا (যেদিকে মুখ করো) দ্বারা সম্বোধন তাদেরকেই করা হয়েছে, যারা আল্লাহর যিকরে বাধা প্রদান করে এবং মসজিদসমূহের ধ্বংস সাধনে প্রয়াসী হয়। তারা পার্থিব লাঞ্ছনা ও পরকালীন কঠিন শাস্তি থেকে কখনো কোথাও পলায়ন করতে পারবে না। কেননা, পূর্ব ও পশ্চিম সবইতো আল্লাহর । যেখানেই পলায়ন করুক না কেন, তিনি তাকে পাকড়াও করবেন। এ দৃষ্টিকোণ থেকে وَجۡہُ اللّٰہِ (ওয়াজহুল্লাহ) এর অর্থ ‘আল্লাহর নৈকট্য ও উপস্থিতি’ (ফাত্হ) আরেক অভমত অনুযায়ী, এর অর্থ হচ্ছে- যদি কাফিরগণ কা’বা গৃহে নামায পড়তে বাধা প্রদান করে, তবে (হে মুসলমানগণ!) তোমাদের জন্য সমগ্র যমীনকে (ভূ-পৃষ্ঠ) ‘মসজিদ’ (নামায পড়ার উপযোগী) করে দেয়া হয়েছে। যেখান থেকেই চাও ক্বিবলার দিকে মুখ করে নাযায পড়ো।
আয়াত নং- ১১৬
________
অনুবাদ:
১১৬ঃ এবং (তারা) বললো, আল্লাহ্ নিজের জন্য সন্তান রেখেছেন (গ্রহণ করেছেন)। পবিত্রতা তাঁরই * (২০৮); বরং তাঁরই মালিকানাধীন যা কিছু আসমানসমূহ এবং যমীনে রয়েছে (২০৯)। সবাই তাঁর সামনে গর্দান অবনত করেছে।
[* অর্থাৎ; তাদের এ অপবাদ থেকে আল্লাহ্ تَعَالٰی পবিত্র ।]
________
টীকা-২০৮ঃ শানে নুযূলঃ ইহুদীগণ হযরত উযায়র (عَلَیۡهِ السَّلَام) কে এবং খৃষ্টানগণ হযরত মসীহ (ঈসা عَلَیۡهِ السَّلَام) কে ‘খোদার পুত্র’ বলেছে এবং আরবের মুশরিকগণ ফিরিশতাদেরকে ‘খোদার কন্যা’ বলেছে। তাদের জবাবে এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে। আল্লাহ্ تَعَالٰی ইরশাদ করেন, سُبۡحٰنَہٗ (সুবহা-নাহু)। অর্থাৎ ‘তিনি পবিত্র এ থেকে যে, তাঁর সন্তান হবে।’ তাঁর প্রতি সন্তানের সম্পর্ক রচনা করা হচ্ছে তাঁর প্রতি অপবাদ দেয়া ও বেয়াদবীই। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে- আল্লাহ্ تَعَالٰی ইরশাদ করেন, “আদম সন্তান আমাকে গালি দিয়েছে, সে আমার সন্তান আছে বলে অপবাদ দিয়েছে; অথচ আমি সন্তান-সন্ততি ও স্ত্রী থেকে পবিত্র।”
টীকা-২০৯ঃ ‘মামলূক হওয়া’ সন্তান হওয়ার পরিপন্থী। যখন সমগ্র পৃথিবী তাঁরই মামলূক (বান্দা), তখন কেউ তাঁর ‘সন্তান’ কিভাবে হতে পারে?
মাসআলাঃ যদি কেউ স্বীয় সন্তানের মালিক হয়ে যায় তখন সে (সন্তান) আযাদ হয়ে যাবে।
আয়াত নং- ১১৭
________
অনুবাদ:
১১৭ঃ নতুন (নমুনা ছাড়া) সৃষ্টিকারী আসমান সমূহের ও যমীনের (২১০) এবং যখন কোন কিছুর নির্দেশ দেন তখন তাকে এটাই বলেন, ‘হয়ে যাও!’ তা সাথে সাথে হয়ে যায় (২১১)।
________
টীকা-২১০ঃ যিনি কোন পূর্ব নমুনা ব্যতিরেকেই বস্তুগুলোকে সেগুলোর সত্তাহীনতা থেকে অস্তিত্ব দান করেছেন।
টীকা-২১১ঃ অর্থাৎ সৃষ্টিজগৎ তাঁর ইচ্ছার সাথে সাথে অস্তিত্বে এসে যায়।
আয়াত নং- ১১৮
________
অনুবাদ:
১১৮ঃ এবং মূর্খরা বললো (২১২), ‘আল্লাহ্ আমাদের সাথে কেন কথা বলেন না (২১৩)? কিংবা যদি আমাদের কোন নিদর্শন মিলতো (২০৪)!’ তাদের পূর্ববর্তীরাও এরূপই বলেছে- তাদের মতো কথা। এদের ও ওদের অন্তরগুলো একই ধরণের (২১৫)। নিশ্চয়ই আমি দৃঢ় বিশ্বাসীদের জন্য নিদর্শনাবলী স্পষ্টভাবে বিবৃত করেছি (২১৬)।
________
টীকা-২১২ঃ অর্থাৎ কিতাবীগণ কিংবা মুশরিকগণ,
টীকা-২১৩ঃ অর্থাৎ “বিনা মাধ্যমে নিজে কোন কথা বলেন না, যেমন ফিরিশতাগণ ও নাবীগণ (عَلَیۡهِمُ السَّلَام) এর সাথে কথা বলেন?” এটা তাদের চরম অহংকার ও জঘন্য গোঁড়ামী। তারা নিজেদেরকে নাবী ও ফিরিশতাদের সমকক্ষ মনে করেছে।
শানে নুযূলঃ রাফি’ ইবনে খোযায়মাহ্ হুযূর আক্বদাস (صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم) কে বললো, “আপনি যদি আল্লাহর রসূল হন, তবে আল্লাহকে বলুন যেন তিনি আমাদের সাথে কথা বলেন। আর আমরাও যেন সেটা শুনতে পাই।” এর জবাবে এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে।
টীকা-২১৪ঃ এটা ঐসব আয়াতকে গোঁড়ামীবশতঃ অস্বীকার করার শামিল, যেগুলো আল্লাহ্ تَعَالٰی দান করেছেন।
টীকা-২১৫ঃ অন্ধত্ব ও দৃষ্টিহীনতায়, কুফর ও মনের কঠোরতায়। এ আয়াতে নাবী কারীম (صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم) কে শান্তনা দেয়া হয়েছে- আপনি তাদেরকে গোঁড়ামী ও অবাধ্যতামূলক অস্বীকারে দুঃখিত হবেন না। পূর্ববর্তী কাফিরগণও নাবীগণ (عَلَیۡهِمُ السَّلَام) এর সাথে এরূপ আচরণ করতো।
টীকা-২১৬ঃ অর্থাৎ ক্বুরআন মাজীদের আয়াতসমূহ ও সুস্পষ্ট মু’জিযাদি সুবিবেচকদের জন্য বিশ্বকুল সরদার হুযূর মুহাম্মদ মুস্তফা صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর নাবূয়্যাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপনের ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ; কিন্তু যে ব্যক্তি এ দৃঢ় বিশ্বাস অর্জনে প্রয়াসী নয় সে এসব প্রমাণ দ্বারা উপকৃত হতে পারবে না।
আয়াত নং- ১১৯
________
অনুবাদ:
১১৯ঃ নিশ্চয় আমি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। আর আপনাকে জাহান্নামীদের সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে না (২১৭)।
________
টীকা-২১৭ঃ যে, তারা কেন ঈমান আনেনি! কারণ, আপনি তো স্বীয় ধর্ম প্রচারের দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন করেছেন।
আয়াত নং- ১২০
________
অনুবাদ:
১২০ঃ এবং কখনো আপনার উপর ইহুদী ও খৃষ্টানগণ সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করবেন না (২১৮)। (হে হাবীব!) আপনি বলে দিন, ‘আল্লাহরহিদায়তই প্রকৃত হিদায়ত (২১৯)।’ এবং (হে শ্রোতা, যেই হও!) যদি তুমি তাদের খেয়ালখুশীর অনুসরণ করো তোমার নিকট জ্ঞান আসার পর, তবে আল্লাহ্ থেকে কেউ না তোমার রক্ষাকারী হবে এবং না সাহায্যকারী (২২০)
________
টীকা-২১৮ঃ এবং এটা অসম্ভব। কেননা, তারাতো বাতিলের উপর প্রতিষ্ঠিত।
টীকা-২১৯ঃ সেটাই অনুসরণের যোগ্য এবং এটা ছাড়া প্রতিটি পথ বাতিল ও ভ্রষ্টতাপূর্ণ।
টীকা-২২০ঃ এ সম্বোধন উম্মতে মুহাম্মাদিয়্যাহ্ صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم কে করা হয়েছে। অর্থাৎ তোমরা যখন জেনে নিয়েছো যে, নাবীকুল সরদার হুযূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم তোমাদের নিকট সত্য ও হিদায়াত এনেছেন, তখন তোমরা কখনো কাফিরদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করোনা। যদি এমন করে থাকো, তবে তোমাদেরকে আল্লাহর কঠিন শাস্তি থেকে রক্ষা করার মতো কেউ নেই। (খাযিন)
0 মন্তব্যসমূহ