তাফসীরে কুরআন - ৭

 

তাফসীরে কুরআন ৭  সূরা বাক্বারা : আয়াত নং- ৬১-৭০  (কানযুল ঈমান ও খাযাইনুল ইরফান থেকে)

 সূরা বাক্বারা : আয়াত নং- ৬১-৭০
(কানযুল ঈমান ও খাযাইনুল ইরফান থেকে)

আয়াত নং- ৬১

________


অনুবাদ:


৬১ঃ এবং যখন তোমরা বলেছিলে, ‘হে মূসা (১০২)! একই (ধরণের) খাদ্যের উপর (১০৩) তো আমাদের কখনো ধৈর্য হবে না। সুতরাং আপনি স্বীয় প্রতিপালকের নিকট দুআ’ করুন যেন (তিনি) জমির উৎপন্ন দ্রব্য আমাদের জন্য উৎপাদন করেন- কিছু শাক-সব্জী, কাকুড়, গম, মসুর এবং পেঁয়াজ।’


(তিনি) বললেন, ‘(তোমরা) কি নিকৃষ্টতর বস্তুকে উৎকৃষ্টতর বস্তুর পরিবর্তে চাও (১০৪)? আচ্ছা! মিশর (১০৫) অথবা কোন এক শহরে অবতরণ করো! সেখানে তোমরা পাবে যা তোমরা চেয়েছো (১০৬)।’ এবং তাদের উপর অবধারিতকরে দেওয়া হলো লাঞ্ছনা ও দারিদ্র (১০৭) এবং (তারা) আল্লাহর ক্রোধের প্রতি ধাবিত হলো (১০৮)। এটা পরিণতি ছিলো এ কথারই যে, তারা আল্লাহর আয়াতগুলোকে অস্বীকার করতো এবং নাবীগণকে অন্যায়ভাবে শহীদ করতো (১০৯);এটা পরিণতি ছিলো তাদের অবাধ্যতাসমূহ ও সীমা লংঘন করার।

________


টীকা-১০২ঃ বানী ইস্রাঈলের এ আচরণটাও অত্যন্ত অশালীনতাসূচক ছিলো যে, একজন মহামর্যাদাবান নাবীকে তারা নাম ধরে সম্বোধন করেছে; ‘হে আল্লাহর নাবী!’ ‘হে আল্লাহর রসূল!’ কিংবা এ ধরণের সম্মানসূচক কালিমা বলেনি- (ফতহুল আযীয)। যখন নাবীগণ (عَلَیۡهِمُ السَّلَام) এর শুধু নাম উচ্চারণ করা বেয়াদবী তখন তাঁদেরকে শুধু ‘মানুষ’ এবং ‘পিয়ন’ বলা কেন বেয়াদবী হবে না? মোটকথা, নাবীগণ (عَلَیۡهِمُ السَّلَام) এর স্মরণে কিঞ্চিত পরিমাণ অসম্মানও জায়েয নয়। 


টীকা-১০৩ঃ ‘একই খাদ্য’ অর্থ ‘এক রকমের খাদ্য’। 


টীকা-১০৪ঃ যখন তারা এ কথার উপরও রাজি হলো না তখন হযরত মূসা (عَلَیۡهِ السَّلَام) আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করলেন। ইরশাদ হলো, “তোমরা অবতরণ করো!”


টীকা-১০৫ঃ ‘মিশর’ (مصر) আরবী ভাষায় শহরকেও বলা হয়। যে কোন শহর হোক এবং নির্দিষ্ট শহর, অর্থাৎ হযরত মূসা (عَلَیۡهِ السَّلَام) এর শহরের নামও। 


এখানে উভয়ই হতে পারে। কারো কারো ধারণা হচ্ছে-এখানে খাস শহর মিশর হতে পারে না। কেননা, এ অর্থে উক্ত শব্দটা (مصر) আরবী ব্যাকরণ অনুযায়ী غیر منصرف*=: (গাইর মুন্সারিফ) হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তখন এ শব্দে تنوین (তানভীন) প্রয়োগ করা যাবে না। যেমন অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- اَلَیۡسَ لِیۡ مُلۡكُ مِصۡرَ এবং اُدۡخُلُوۡا مِصۡرَ, ا ; কিন্তু এ অভিমতটা সঠিক নয়। কারণ, মধ্যবর্তী অক্ষর ‘সাকিন’ হওয়ার কারণে, (هِنۡدٌ) শব্দের ন্যায় এ শব্দটিকেও  مصر (منصرف) পড়া দুরস্ত।'ইলমে নাহভ' (علم نحو) এ এর বিস্তারিত বিবরণ বিদ্যমান। তাছাড়া, হযরত হাসান প্রমুখের ‘ক্বিরআত’- এ শব্দটা ‘তানভীনবিহীন’ এসেছে। হযরত ওসমান (رَضِيَ اللّٰهُ  تَعَالٰی عَنۡهُ) এর কোন কোন কপিতে (مصحف) এবং হযরত উবাই (رَضِيَ اللّٰهُ  تَعَالٰی عَنۡهُ) এর কপিতেও এরূপ উল্লেখ করা হয়েছে। এজন্যই, হযরত অনুবাদক (আ’লা হযরত কুদ্দিসা সিররহু) অনুবাদে উভয়টা গ্রহণ করেছেন। আর নির্দিষ্ট শহরের (মিশর) অধিক সম্ভাবনাময় অর্থকে প্রথমে উল্লেখ করেছেন।


টীকা-১০৬ঃ অর্থাৎ শাক-সব্জী, কাকুড় ইত্যাদি। যদিও এসব বস্তু চাওয়া তাদের জন্য পাপ ছিলো না, কিন্তু ‘মান্ন’ এবং ‘সালওয়া’র ন্যায় বিনা পরিশ্রমে অর্জিত নি‘মাত ত্যাগ করে এসব বস্তুর দিকে ঝুঁকে পড়া তাদের হীনম্যতার পরিচায়ক ছিলো। সর্বদা তাদের মানসিক প্রবণতা নিম্নদিকেই ছিলো। আর হযরত মূসা ও হারূন (عَلَیۡهِمَا السَّلَام) প্রমুখের ন্যায় মহাসম্মানিত ও উচ্চ সাহসিকতাসম্পন্ন নাবীগণ (عَلَیۡهِمُ السَّلَام) এর পর বানী ইস্রাঈলের হীনমন্যতা এবং কাপুরুষতার পূর্ণ বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এবং জালূতের আধিপত্য বিস্তার এবং বোখ্তে নাসরের ঘটনার পর তো তারা দারুন লাঞ্ছিত হয়েছিলো। এর বর্ণনা ضُرِبَتۡ عَلَیۡہِمُ الذِّلَّۃُ (তাদের উপর লাঞ্ছনা অবধারিত হয়েছে) এর মধ্যেই রয়েছে।


টীকা-১০৭ঃ ইহুদীদের লাঞ্ছনা এ যে, পৃথিবীতে কোথাও তাদের নাম মাত্রেও রাষ্ট্র ক্ষমতা নেই। 


।[* এ আয়াতে এ কথা বুঝা যায় যে, বিশ্বে ইহুদী সম্প্রদায় লাঞ্ছনা এবং দারিদ্রের অভিশাপে অভিশপ্ত থাকবে, স্বাধীন জাতির মর্যাদা লাভ করতে পারবে না;কিন্তু বর্তমানে তাদের প্রতিষ্ঠিত ইস্রাঈল রাজ্য এর পরিপন্থী সাক্ষ্য বহন করে! এর জবাব হচ্ছে- সূরা আল-ই-ইমরানের আয়াতে ইরশাদ হয়- অর্থাৎ ‘তারা যদি আল্লাহর রজ্জুকে (আঁকড়ে ধরে) অর্থাৎ ইসলাম গ্রহণ করে বা অন্য জাতির আশ্রয় ও সাহায্য প্রাপ্ত হয় তখন তারা ঐ অভিশাপ থেকে মুক্তি লাভ করবে।’ তাই তাদের অনেকে ইসলাম গ্রহণ করেছেন আর অন্যান্যরা দীর্ঘকাল যাবৎ উক্ত লাঞ্ছনা ভোগ করার পর আজ পর্যন্ত ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন শক্তিধর রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রত্যক্ষ সাহায্যে বেঁচে আছে মাত্র।] আর দারিদ্র হলো- ধন সম্পদ থাকা সত্ত্বেও তারা লোভের বশীভূত হয়ে সর্বদা পরের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে। 


টীকা-১০৮ঃ নাবীগণ (عَلَیۡهِمُ السَّلَام) এবং আল্লাহর নেককার বান্দাদের বদৌলতে যেসব মর্যাদা তারা লাভ করেছিলো সেগুলো থেকে তারা বঞ্চিত হয়ে গেলো। এ গযবের কারণ শুধু এ ছিলো না যে, তারা আসমানী খাদ্যের পরিবর্তে মাটি উৎপাদিত খাদ্য চেয়েছিলো কিংবা এ ধরণের অন্যান্য পাপাচারসমূহ (- ও নয়), যেগুলো হযরত মূসা (عَلَیۡهِ السَّلَام) এর সময়ে সংঘটিত হয়েছিলো; বরং নাবূয়্যাতের যুগ থেকে দূরে হওয়া এবং দীর্ঘকাল অতিবাহিত হওয়ার কারণে তাদের সৎকর্মের যোগ্যতা সমূলে বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিলো এবং অতীব ঘৃণ্য কার্যাদি ও জঘণ্য অপরাধসমূহ তাদের দ্বারা সংঘটিত হচ্ছিলো। এগুলো 


তাদের সে লাঞ্ছনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 


টীকা-১০৯ঃ যেমন তারা হযরত যাকারিয়া, হযরত য়াহ্য়া, হযরত শা‘ইয়া (عَلَیۡهِمُ السَّلَام)- কে শহীদ করেছিলো। বস্তুতঃ এ হত্যাযজ্ঞ এমনি ‘নাহক্ব’ ছিলো যে, এর কারণ কি হন্তাগণও বলতে পারতো না।



আয়াত নং- ৬২

________


অনুবাদ:


৬২ঃ নিশ্চয় ঈমানদারগণ, (অনুরূপভাবে,) ইহুদী, খৃষ্টান ও তারকা-পূজারীদের মধ্যে যারা সত্য অন্তরে আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর ঈমান এনেছে আর সৎ কাজ করে, তাদের প্রতিদান তাদের প্রতিপালকের নিকটে রয়েছে এবং তাদের জন্য না কোন ভয়-ভীতি আছে, না কোন প্রকার দুঃখ (১১০)

________


টীকা-১১০ঃ শানে নুযুলঃ ইবনে জরীর ও ইবনে আবী হাতিম ইমাম সুদ্দী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, এ আয়াত শরীফ হযরত সালমান ফার্সী (رَضِيَ اللّٰهُ  تَعَالٰی عَنۡهُ) এর সঙ্গীদের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে। (লুবানুন্ নুক্বূল)



আয়াত নং- ৬৩

________


অনুবাদ:


৬৩ঃ এবং যখন আমি তোমাদের থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছিলাম (১১১) এবং তোমাদের (মাথার) উপর ‘তূর’ (পাহাড়) উত্তোলন করেছিলাম (১১২); ‘গ্রহণ করে নাও যা কিছু আমি তোমাদেরকে প্রদান করেছি, শক্তভাবে (১১৩) এবং এর সারমর্মগুলো স্মরণ করো, এ আশায় যে, তোমাদের পরহেয্গারী (খোদাভীতি) অর্জিত হবে!’

________


টীকা-১১১ঃ যে, তোমরা ‘তাওরীত’ মান্য করবে এবং তদনুরূপ আমল করবে। অতঃপর তোমরা এর বিধিবিধানগুলোকে কঠিন ও কষ্টকর জ্ঞান করে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করছো, এতদসত্ত্বেও যে, তোমরা নিজেরাই বারংবার হযরত মূসা (عَلَیۡهِ السَّلَام) এর নিকট এ ধরণের একটা আসমানী কিতাবের জন্য সবিনয় প্রার্থনা করেছিলে, যাতে শরীয়তের বিধি-বিধান এবং ইবাদতের নিয়মাবলী বিস্তারিত সুবিন্যস্ত থাকবে আর হযরত মূসা (عَلَیۡهِ السَّلَام)ও বারংবার তোমাদের থেকে সেটা গ্রহণ করার অঙ্গীকার নিয়েছিলেন। যখনই সেই কিতাবখানা প্রদত্ত হলো, (তখন) তোমরা তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছো এবং অঙ্গীকার পূরণ করো নি। 


টীকা-১১২ঃ বানী ইস্রাঈল কতৃক ওয়াদা ভঙ্গের পর হযরত জিব্রাঈল (عَلَیۡهِ السَّلَام) আল্লাহর নির্দেশক্রমে ‘তূর’ পাহাড়কে (আপন স্থান হতে) উৎপাদিত করে তাদের মাথার উপর শারীরিক উচ্চতা পরিমাণ উপরে উঠিয়ে ঝুলিয়ে ধরলেন। হযরত মূসা (عَلَیۡهِ السَّلَام) বললেন, “হয়তো তোমরা অঙ্গীকার পূরণ করো, নতুবা পাহাড় তোমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হবে এবং তোমাদেরকে পিষ্ট করা হবে।” এটা বাহ্যিকভাবে প্রতিশ্রুতি পূরণ করার উপর চাপ সৃষ্টি করার নামান্তর ছিলো; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, পাহাড় তাদের মাথার উপর ঝুলিয়ে দেয়া আল্লাহর নিদর্শন এবং তাঁর কুদরতের এক অকাট্য প্রমাণ। এ থেকে অন্তরসমূহে এ প্রশান্তি অর্জিত হয় যে, নিশ্চয়ই এ (মহান) রসূল আল্লাহর কুদরতের প্রকাশস্থল। মনের এ প্রশান্তিই তাঁকে মান্য করার এবং কৃত অঙ্গীকার পূরণ করার প্রকৃত মাধ্যম। 


টীকা-১১৩ঃ পূর্ণ প্রচেষ্টা সহকারে। 



আয়াত নং- ৬৪

________


অনুবাদ:


৬৪ঃ অতঃপর, এর পরে তোমরা ফিরে গেছো। তারপর যদি আল্লাহর কৃপা এবং তাঁর রহমত তোমাদের উপর না হতো, তবে তোমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতে (১১৪)।

________


টীকা-১১৪ঃ এখানে ‘কৃপা’ ও ‘রহমত’ থেকে হয়তো ‘তাওবা করার শক্তিদান’-ই উদ্দেশ্য কিংবা ‘তাদের জন্য অবধারিত আযাবকে পিছিয়ে দেয়া।’ (মাদারিক ইত্যাদি) অন্য একটা অভিমত এও রয়েছে যে, ‘আল্লাহর কৃপা ও রহমত’ মানে ‘হুযূর বিশ্বকুল সরদার (صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم) এর পবিত্র সত্তা’। অর্থাৎ যদি তোমাদের ‘খাতামুল মুরসালীন’ (صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم) এর সত্তারূপী দৌলত অর্জিত না হতো এবং তাঁর হিদায়াত লাভ না হতো, তবে তোমাদের পরিণতি হতো ধ্বংস ও ক্ষতি।



আয়াত নং- ৬৫

________


অনুবাদ:


৬৫ঃ এবং নিশ্চয় নিশ্চয়, তোমাদের জানা আছে- তোমাদের মধ্যকার তারাই, যারা শনিবারে সীমা লংঘন করেছে (১১৫)। অতঃপর আমি তাদের উদ্দেশ্যে বললাম, ‘(তোমরা) হয়ে যাও ধিকৃত বানর!’

________


টীকা-১১৫ঃ ‘আয়লা’ নামক শহরে ইস্রাঈল সম্প্রদায়ের আবাস ছিলো। তাদের প্রতি শনিবার ইবাদতের জন্য নির্দ্ধারণ করার নির্দেশ ছিলো আর ঐ দিন যেন তারা মাছ শিকার বন্ধ রাখে এবং পার্থিব কার্যাদি থেকেও বিরত থাকে। 


তাদের একদল লোক এ চালবাজি করলো যে, তারা শুক্রবার সমুদ্রের তীরে বহু গর্ত খনন করতো। আর শনিবার ভোরে সমুদ্র থেকে সেই গর্তগুলো পর্যন্ত ছোট ছোট খাল খনন করতো। সেগুলো দিয়ে মাছ পানির সাথে এসে গর্তে আটকা পড়তো। রবিবার সেই মাছগুলো শিকার করতো আর বলতো, “আমরা মাছগুলোকে পানি থেকে শনিবারে উঠাচ্ছিনা।” চল্লিশ কিংবা সত্তর বছরকাল তাদের এ অপকর্ম চলতে থাকে। 


যখন দাঊদ (عَلَیۡهِ السَّلَام) এর নাবূয়্যাতের যমানা আসলো, তখন তিনি তাদেরকে তা করতে নিষেধ করলেন। আর বললেন, “মাছগুলোকে আটক করাই শিকারের নামান্তর। শনিবারে যা করছো তা থেকে বিরত হও। নতুবা তোমরা কঠিন শাস্তিতে আক্রান্ত হবে।” তারা তা থেকে বিরত হয়নি। তিনি (হযরত দাউদ عَلَیۡهِ السَّلَام) দুআ’ (অভিসম্পাত) করলেন। আল্লাহ্ تَعَالٰی তাদেরকে বানরের আকৃতিতে বিকৃত করে দিলেন। 


তাদের জ্ঞান-বুদ্ধি ও অনুভূতি শক্তি তো বহাল ছিলো;কিন্তু কথা বলার শক্তি লুপ্ত হয়ে গিয়েছিলো। তাদের শরীর থেকে দুর্গন্ধ নির্গত হতে লাগলো। নিজেদের এ শোচনীয় অবস্থার উপর কাঁদতে কাঁদতে মাত্র তিন দিনের মধ্যেই সবাই ধ্বংসের শিকার হলো। এদের বংশধর দুনিয়ায় বাকী নেই। তাদের সংখ্যা ছিলো সত্তর হাজারের কাছাকাছি। বানী ইস্রাঈলের দ্বিতীয় দল, যাদের সংখ্যাও ছিলো প্রায় বার হাজার। তারা ওদেরকে ঐ অপকর্ম থেকে বারণ করেছিলো। যখন এরা অমান্য করলো, তখন তারা ওদের এবং নিজেদের মহল্লাগুলোর মাঝখানে দেয়াল নির্মাণ করে পৃথক হয়ে গেলো। তারা সবাই (শাস্তি থেকে) রক্ষা পেলো।



আয়াত নং- ৬৬

________


অনুবাদ:


৬৬ঃ অতঃপর আমি (ঐ বস্তির) এ ঘটনাকে এর পূর্ব ও পরবর্তীদের জন্য (শিক্ষনীয়) দৃষ্টান্ত করেছি এবং পরহেয্গারদের জন্য উপদেশ (করেছি)।



আয়াত নং- ৬৭

________


অনুবাদ:


৬৭ঃ এবং যখন মূসা আপন সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, ‘খোদা তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন- তোমরা একটা গরু যবেহ করো (১১৬)।’ (তারা) বললো, ‘আপনি কি আমাদেরকে ঠাট্টার পাত্র বানাচ্ছেন (১১৭)? তিনি (হযরত মূসা) বললেন, ‘আল্লাহর শরণ (এ থেকে) যে, আমি অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হই (১১৮)!’

________


টীকা-১১৬ঃ বানী ইস্রাঈল-এ ‘আমীল’ নামক একজন ধনশালী ব্যক্তি ছিলো। তার চাচাত ভাই ‘মীরাস’ (উত্তরাধিকার সূত্রে ত্যাজ্য সম্পত্তি) পাবার লোভে তাকে হত্যা করে তার লাশ অন্য বস্তির ফটকে ফেলে আসলো। আর সে (হন্তা) নিজেই সে খুনের শাস্তি দাবী করে বসলো। সেখানকার লোকজন হযরত মূসা (عَلَیۡهِ السَّلَام) এর নিকট আবেদন জানালো, “আপনি দুআ’ করুন, যেন আল্লাহ্ এর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করে দেন।” এর উপর নির্দেশ এলো যেন তারা একটা গরু যবেহ করে এর কোন একটা অংশ নিহত ব্যক্তির মৃতদেহের উপর নিক্ষেপ করে। তখনই সে জীবিত হয়ে আপন হত্যাকারীর নাম বলে দেবে।


টীকা-১১৭ঃ কেননা, নিহত ব্যক্তির (হত্যাকান্ডের) অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া এবং গরু যবেহ করার মধ্যে কোন প্রকার সামঞ্জস্য বুঝা যাচ্ছে না। 


টীকা-১১৮ঃ এমন জবাব, যা প্রশ্নের সাথে মিল রাখে না, মুর্খেরই কাজ। কিংবা এর অর্থ হচ্ছে- মোকাদ্দমা দায়ের করা বা বিচার প্রার্থনা করার ক্ষেত্রে ঠাট্টা করা অজ্ঞ লোকদেরই কাজ। নাবীগণ (عَلَیۡهِمُ السَّلَام) এর শান বহু ঊর্ধ্বে। 


এক কথায়, যখনই বানী ইস্রাঈল বুঝতে পারলো যে, গরু যবেহ করা বাঞ্ছনীয়, তখন তারা তাঁর (হযরত মূসা عَلَیۡهِ السَّلَام) নিকট গরুর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কথা জিজ্ঞাসাকরলো। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, যদি বানী ইস্রাঈল গরু সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন না করতো, তবে যে কোন গরু যবেহ করলে যথেষ্ঠ হতো।



আয়াত নং- ৬৮

________


অনুবাদ:


৬৮ঃ (তারা) বললো, ‘আপন প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করুন যেন তিনি আমাদেরকে বলে দেন-গরুটা কেমন! তিনি (হযরত মূসা) বললেন, ‘তিনি (আল্লাহ্) ইরশাদ করেছেন- সেটা এমন এক গাভী, যা না বৃদ্ধ, না অল্প বয়স্কা; বরং উভয়ের মাঝামাঝি (বয়সের)। সুতরাং পালন করো, তোমাদের প্রতি যা করার নির্দেশ রয়েছে।’



আয়াত নং- ৬৯

________


অনুবাদ:


৬৯ঃ (তারা) বললো, ‘আপন প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করুন যেন (তিনি) আমাদেরকে বলে দেন-এর রং কিরূপ হবে।’ (হযরত মূসা) বললেন, ‘তিনি (আল্লাহ্ পাক) ইরশাদ করছেন- তা একটা হলুদ বর্ণের গাভী, যার রং হবে গাঢ় উজ্জ্বল (চমকিত), (যা) দর্শকদের আনন্দ দেয়।’



আয়াত নং- ৭০

________


অনুবাদ:


৭০ঃ (তারা) বললো, ‘আপন প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করুন যেন তিনি আমাদেরকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, সেই গাভীটা কেমন! নিশ্চয় গাভীগুলো সম্পর্কে আমাদের সন্দেহ হয়ে গেছে এবং আল্লাহ্ যদি চান, তবে আমরা দিশা পেয়ে যাবো (১১৯)

________


টীকা-১১৯ঃ বিশ্বকুল সরদার হুযূর কারীম (صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم) ইরশাদ করেছেন, “যদি তারা اِنۡ شَاءَ اللّٰه ‘ইনশা আল্লাহ্’ না বলতো তবে কখনো তারা গাভী পেতো না।”


মাসআলাঃ প্রতিটি সৎ কাজে اِنۡ شَاءَ اللّٰه ‘ইনশা আল্লাহ্’ (যদি আল্লাহ্ পাক ইচ্ছা করেন) বলা মুস্তাহাব এবং বরকত অর্জনের মাধ্যম।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ