তাফসীরে কুরআন ৩৯

সূরা আলে ইমরান : আয়াত নং- ৯১-১০০ (কানযুল ঈমান ও খাযাইনুল ইরফান থেকে)


সূরা আলে ইমরান : আয়াত নং- ৯১-১০০
(কানযুল ঈমান ও খাযাইনুল ইরফান থেকে)

আয়াত নং- ৯১

________

অনুবাদ:

৯১ঃ ঐসব লোক, যারা কাফির হয়েছে এবং কাফির হয়েই মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের মধ্যে কারো পক্ষ থেকে পৃথিবী ভর্তি স্বর্ণও কখনো ক্ববূল করা হবে না যদিও তারা নিজেদের মুক্তির জন্য প্রদান করে। তাদের জন্য বেদনাদায়ক শাস্তি রয়েছে এবং তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।


আয়াত নং- ৯২

________

অনুবাদ:

৯২ঃ তোমরা কখনো পূণ্য পর্যন্ত পৌঁছবে না যতক্ষণ আল্লাহর পথে আপন প্রিয়বস্তু ব্যয় করবে না (১৭২) এবং তোমরা যা কিছু ব্যয় করো তা আল্লাহর জানা আছে।

________ 

টীকা-১৭২ঃ بِرٌ (বিরর) দ্বারা তাক্বওয়া (খোদাভীরুতা) ও আনুগত্য (বন্দেগী) বুঝানো হয়েছে। হযরত ইবনে ওমর (رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُمَا) বলেন, “এখানে ‘ব্যয় করা’ ব্যাপকার্থক। সব ধরণের সাদাক্বাহ্ এ‘তে শামিল রয়েছে। অর্থাৎ ‘ওয়াজিব সাদাক্বাহ’ হোক কিংবা ‘নফল সাদাক্বাহ’ সবই এর অন্তর্ভুক্ত।” 

হযরত হাসান (رَضِيَ اللّٰهُ  تَعَالٰی عَنۡهُ) এর অভিমত হচ্ছে- যে সম্পদ মুসলমানদের নিকট প্রিয় হয় এবং তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় করে, তা এ আয়াতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে; যদিও একটি খেজুরই হয়। (খাযিন) 

হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আযীয্ (رَضِيَ اللّٰهُ  تَعَالٰی عَنۡهُ) বস্তায় বস্তায় চিনি খরিদ করে সাদাক্বাহ্ করতেন। তাঁকে বলা হলো, “সেগুলোর মূল্য কেন সাদাক্বাহ্ করেন না?” তিনি বললেন, “চিনি আমার নিকট প্রিয় ও পছন্দনীয়। আমি চাই আল্লাহর রাস্তায় প্রিয় বস্তু ব্যয় করতে।” (মাদারিক)

বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসে বর্ণিত, হযরত আবু তালহা আনসারী মাদীনা শরীফে বড় অর্থশালী লোক ছিলেন। তাঁর নিকট তাঁর সমস্ত সম্পদের মধ্যে ‘বায়রাহা’ বাগান অত্যন্ত প্রিয় ছিলো। যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলো, তখন তিনি রাসূলে পাকের দরবারে দন্ডায়মান হয়ে আরয করলেন, “আমার নিকট আমার সমস্ত সম্পদের মধ্যে ‘বায়রাহা’ সর্বাধিক প্রিয়। আমি সেটা আল্লাহর রাহে সাদাক্বাহ করছি।” হুযূর এর উপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন এবং হযরত আবু তালহা (رَضِيَ اللّٰهُ  تَعَالٰی عَنۡهُ) হুযূর (صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم) এর ইঙ্গিতে তাঁর নিকটাত্মীয়বৃন্দ ও চাচার বংশধরদের মধ্যে সেটা বন্টন করে দিলেন। 

হযরত ওমর ফারূক (رَضِيَ اللّٰهُ  تَعَالٰی عَنۡهُ) হযরত আবূ মূসা আশ‘আরী (رَضِيَ اللّٰهُ  تَعَالٰی عَنۡهُ) কে লিখেছিলেন, “আমার জন্য একটি দাসী ক্রয় করে পাঠিয়ে দাও।” যখন সে (দাসী) এসে পৌঁছলো, তাঁর নিকট খুব পছন্দ হলো। তিনি এ আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্য তাকে আযাদ করে দিলেন।


আয়াত নং- ৯৩

________

অনুবাদ:

৯৩ঃ যাবতীয় খাদ্য বানী ইস্রাঈলের জন্য হালাল ছিলো কিন্তু ঐ খাদ্য যা য়া’কূব নিজের উপর হারাম করে নিয়েছিলো তাওরীত অবতীর্ণ হবার পূর্বে। আপনি বলুন, ‘তাওরীত এনে পাঠ করো যদি সত্যবাদী হও (১৭৩)।

________ 

টীকা-১৭৩ঃ শানে নুযূলঃ ইহুদীগণ বিশ্বকুল সরদার (صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم) কে বললো, “হুযূর, আপনি নিজেকে নিজে ইব্রাহীম ( عَلَیۡهِ السَّلَام) এর দ্বীনের উপর আছেন বলে ধারণা রাখেন; অথচ হযরত ইব্রাহীম ( عَلَیۡهِ السَّلَام) উটের দুধ ও মাংস আহার করতেন না, কিন্তু আপনি আহার করেন। সুতরাং আপনি ইব্রাহীম ( عَلَیۡهِ السَّلَام) এর দ্বীনের উপর হলেন কী ভাবে? 

হুযূর ইরশাদ ফরমালেন, “এসব বস্তু হযরত ইব্রাহীম ( عَلَیۡهِ السَّلَام) এর জন্য হালাল ছিলো।” ইহুদীগণ বলতে লাগলো, “এগুলো হযরত নূহ ( عَلَیۡهِ السَّلَام) এর উপরও হারাম ছিলো, হযরত ইব্রাহীম ( عَلَیۡهِ السَّلَام) এর উপর হারাম ছিলো এবং আমাদের নিকট পর্যন্ত হারাম রূপেই চলে এসেছে।” 

এর জবাবে আল্লাহ্ تَعَالٰی এ আয়াত শরীফ নাযিল করলেন। আর বলা হয়েছে যে, ইহুদীদের এ দাবী ভুল; বরং এসব বস্তু হযরত ইব্রাহীম ( عَلَیۡهِ السَّلَام), হযরত ইসমাঈল, হযরত ইসহাক্ব ও হযরত য়া’কূব (عَلَیۡهِمُ السَّلَام) এর উপর হালাল ছিলো। হযরত য়া’কূব ( عَلَیۡهِ السَّلَام) কোন কারণে এসব বস্তু নিজের উপর হারাম করেছিলেন। আর এ হারাম হবার বিধান তাঁর বংশধরদের মধ্যেই প্রচলিত থাকে। ইহুদীরা এটা অস্বীকার করলো। তখন হুযূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন, “এ বিষয়ে তাওরীতই বলবে। তোমরা যদি অস্বীকার করো, তবে তাওরীত আনো।” এতে ইহুদীরা অপমানিত ও লজ্জিত হবার আশংকা বোধ করলো।কাজেই, তারা তাওরীত আনতে সাহস করলোনা। (ফলে,) তাদের মিথ্যা প্রকাশিত হলো এবং তাদেরকে লজ্জিত হতে হলো।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ক) এ থেকে প্রমাণিত হলো যে, পূর্ববর্তী শরীয়তগুলোর মধ্যে বিধানাবলী রহিত হতো। এতে ইহুদীদের খন্ডন রয়েছে, যারা ‘আহ্কাম’ রহিত হওয়ায় বিশ্বাসী ছিলো না।

খ) হুযূর ‘উম্মী’ ছিলেন। এতদসত্ত্বেও ইহুদী সম্প্রদায়কে তাওরীত দ্বারা অভিযুক্ত করা এবং তাওরীতের বিষয়বস্তুগুলো থেকে প্রমাণ পেশ করা তাঁর মু’জিযা ও নবূয়্যাতেরই প্রমাণ। আর এর দ্বারা তাঁর খোদা প্রদত্ত ও অদৃশ্য জ্ঞানের প্রমাণ পাওয়া যায়।


আয়াত নং- ৯৪

________

অনুবাদ:

৯৪ঃ সুতরাং এরপর যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা রটনা করে (১৭৪), তবে তারাই যালিম।’

________ 

টীকা-১৭৪ঃ এবং বলে বেড়ায় যে, ‘ হযরত ইব্রাহীম ( عَلَیۡهِ السَّلَام) এর দ্বীনের মধ্যে উটের মাংস ও দুধ আল্লাহ্ হারাম করেছেন।’


আয়াত নং- ৯৫

________

অনুবাদ:

৯৫ঃ আপনি বলুন, ‘আল্লাহ্ সত্যবাদী। কাজেই, ইব্রাহীমের দ্বীনের উপর চলো (১৭৫); যিনি প্রত্যেক বাতিল থেকে আলাদা ছিলেন এবং অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।’

________ 

টীকা-১৭৫ঃ কারণ, সেটাই হচ্ছে ‘ইসলাম’ ও ‘দ্বীন-ই-মুহাম্মাদী صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم।


আয়াত নং- ৯৬

________

অনুবাদ:

৯৬ঃ নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর, যা মানবজাতির ইবাদতের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই যা মক্কায় অবস্থিত, বরকতময় এবং সমগ্র জাহানের পথ প্রদর্শক (১৭৬)।

________ 

টীকা-১৭৬ঃ শানে নুযূলঃ ইহুদীরা মুসলমানদেরকে বলেছিলো, “বায়তুল মুক্বাদ্দাস আমাদের ক্বিবলা, কা’বা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর, সেটার চেয়েও পূরানো, নবীগণের হিজরতের স্থান এবং ইবাদতের ক্বিবলা।” মুসলমানরা বললেন, “কা’বা শ্রেষ্ঠতর।” এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে এবং তাতে বলা হয়েছে যে, সর্বপ্রথম স্থান যাকে আল্লাহ্ تَعَالٰی আনুগত্য ও ইবাদতের জন্য নির্দ্ধারিত করেছেন, নামাযের ক্বিবলা এবং হজ্জ্ ও তাওয়াফের স্থান সাব্যস্থ করেছেন, যার মধ্যে সৎকার্যাদির সাওয়াব বেশী পরিমাণে অর্জিত হয়, তা হচ্ছে কা’বা মু‘আযযামাই, যা সম্মানিত মক্কা নগরীতেই অবস্থিত। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, কা’বা মু‘আযযামা বায়তুল মুক্বাদ্দাসের চল্লিশ বছর পূর্বে নির্মান করা হয়েছে।


আয়াত নং- ৯৭

________

অনুবাদ:

৯৭ঃ সেটার মধ্যে সুস্পষ্ট নিদর্শনাদি রয়েছে (১৭৭)- ইব্রাহীমের দাঁড়াবার স্থান (১৭৮) এবং যে ব্যক্তি সেটার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে সে নিরাপত্তার মধ্যে থাকে (১৭৯); এবং আল্লাহরই জন্য মানবকূলের উপর সেই ঘরের হজ্জ্ করা (ফরয) যে সেটা পর্যন্ত যেতে পারে (১৮০)। আর যে অস্বীকারকারী হয়, তবে আল্লাহ্ সমগ্র জাহান থেকে বে-পরোয়া (১৮১)

________ 

টীকা-১৭৭ঃ যেগুলো সেটার সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে। সে সব নিদর্শনের মধ্যে কয়েকটা নিম্নরূপঃ ১.পাখী কা’বা শরীফের উপর বসেনা এবং সেটার উপর দিয়ে উড়ে যায় না, বরং উড়ে নিকটে এসে এদিক-সেদিক সরে পড়ে। আর যে পাখি অসুস্থ হয়ে পড়ে সেটা তার চিকিৎসা এভাবে করে যে, কা’বা শরীফের হাওয়ার মধ্য দিয়ে উড়ে যায়। এর দ্বারা সেগুলো নিরাময় হয়ে যায়। ২.পশু একে অপরকে হেরেমের মধ্যে কষ্ট দেয়না। এমনকি কুকুর এ ভূ-খন্ডে হরিণের উপর হামলা করেনা এবং সেখানে শিকার করেনা। ৩.মানুষের অন্তর কা’বা মু‘আযযমার প্রতি আকর্ষণ করে এবং সেটার প্রতি দৃষ্টিপাত করতেই চোখ থেকে পানি জারী হয়ে যায়। 

 ৪.প্রত্যেক জুম্‘আহ্ রাত্রিতে আউলিয়া কিরামের রুহসমূহ এর চতুর্দিকে হাযির হয়ে যায় এবং ৫. যে কেউ সেই ঘরের অসম্মানের ইচ্ছা করে সে ধ্বংস হয়ে যায়। তাছাড়া, ঐসব নিদর্শনের মধ্য থেকে ‘মাক্বামে ইব্রাহীম’ ইত্যাদি হচ্ছে এমনসব বস্তু, যেগুলো আয়াতের মধ্যেই বর্ণনা করা হয়েছে। (মাদারিক, খাযিন, আহমাদী) 


টীকা-১৭৮ঃ ‘মাক্বামে ইব্রাহীম’ (হযরত ইব্রাহীম  عَلَیۡهِ السَّلَامএর দাঁড়াবার স্থান) হচ্ছে সেই পাথর, যার উপর হযরত ইব্রাহীম ( عَلَیۡهِ السَّلَام) কা’বা শরীফের নির্মান কার্য সম্পাদনের সময় দন্ডায়মান হতেন এবং এর মধ্যে তাঁর ক্বদম মুবারকের চিহ্ন ছিলো, যা দীর্ঘকাল অতিবাহিত হওয়া ও অসংখ্য হাতের স্পর্শ সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত কিছু অবশিষ্ট রয়েছে। 

টীকা-১৭৯ঃ এমন কি যদি কেউ হত্যা ও অপরাধ করে ‘হেরম’-এর মধ্যে আশ্রয় নেয়, তবে সেখানে তাকে না হত্যা করা হবে, না তার উপর কোন শাস্তি কার্যকর করা হবে। হযরত ওমর رَضِيَ اللّٰهُ  تَعَالٰی عَنۡهُ বলেছেন, “যদি আমি আপন পিতা খাত্তাবের হত্যাকারীকেও হেরম শরীফের অভ্যন্তরে পাই, তবে তার গায়ে হাত লাগাবোনা, যতক্ষণ না সে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে।” 

টীকা-১৮০ঃ মাসআলাঃ এ আয়াত হজ্জ্ ফরয হবার বিবরণ রয়েছে এবং এ কথারও যে, তজ্জন্য সামর্থ্য থাকা পূর্বশর্ত। 

হাদীস শরীফে সায়্যিদে আ’লম صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم সেটার ব্যাখ্যা ‘সফর-সামগ্রী’ ও ‘বাহন’ দ্বারা করেছেন। ‘সফর সামগ্রী’ মানে খাদ্য ও পানীয়ের ব্যবস্থাপনা এ পরিমাণ হওয়া চাই যে, গিয়ে ফিরে আসা পর্যন্ত সময়ের জন্য যথেষ্ঠ হয়। আর তাও এ ফিরে আসার সময় পর্যন্ত পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণের অতিরিক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। পথের নিরাপত্তাও জরুরী। কেননা, তা ব্যতীত ‘সামর্থ্য’ প্রমাণিত হয়না। 

টীকা-১৮১ঃ এ থেকে আল্লাহ্ تَعَالٰی এর অসন্তুষ্টি প্রকাশ পায়। আর এ মাস্আলাও প্রমাণিত হয় যে, অকাট্যভাবে প্রমাণিত ফরযের অস্বীকারকারী কাফির।


আয়াত নং- ৯৮

________

অনুবাদ:

৯৮ঃ আপনি বলুন, ‘হে কিতাবীরা! আল্লাহর আয়াতসমূহ কেন অমান্য করছো (১৮২)? এবং তোমাদের কাজ আল্লাহর সামনেই রয়েছে।’

________ 

টীকা-১৮২ঃ যেগুলো বিশ্বকুল সরদার صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর নবূয়্যাতের সত্যতার প্রমাণ বহন করে।


আয়াত নং- ৯৯

________

অনুবাদ:

৯৯ঃ আপনি বলুন, ‘হে কিতাবীরা! কেন আল্লাহর পথে বাধা দিচ্ছো (১৮৩) তাকে, যে ঈমান এনেছে? সেটা বক্র করতে চাচ্ছো, অথচ তোমরা নিজেরাই এর উপর সাক্ষী রয়েছো (১৮৪)? এবং আল্লাহ্ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে গাফিল নন।’

________ 

টীকা-১৮৩ঃ নবী করীম صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم কে অস্বীকার করে এবং তাঁর প্রশংসা ও গুণাবলী গোপন করে, যা তাওরীতে উল্লেখ করা হয়েছে।

টীকা-১৮৪ঃ যে, বিশ্বকুল সরদার صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর প্রশংসা করে এবং তাঁর প্রশংসা তাওরীতে লিপিবদ্ধ আছে এবং আল্লাহর নিকট যেই ধর্ম গ্রহণীয়, তা শুধু দ্বীন-ই-ইসলামই।


আয়াত নং- ১০০

________

অনুবাদ:

১০০ঃ হে ঈমানদাররা! যদি তোমরা কিছু সংখ্যক কিতাবীর কথা মতো চলো, তবে তারা তোমাদের ঈমানের পর তোমাদেরকে কাফির করে ছাড়বে (১৮৫)।

________ 

টীকা-১৮৫ঃ শানে নুযূলঃ ‘আউস’ ও খাযরাজ’ গোত্রদ্বয়ের মধ্যে প্রথমে ভীষণ শত্রুতা ছিলো এবং দীর্ঘদিন তাদের মধ্যে যুদ্ধ অব্যাহত ছিলো। বিশ্বকুল সরদার صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর বদৌলতে সেই গোত্রদ্বয়ের লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করে পরস্পর অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হলো। একদিন তাঁরা একটা মজলিসে বসে হৃদ্যতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ আলাপ আলোচনায় মশগুল ছিলেন। শাস ইবনে ক্বায়স ইহুদী, যে ইসলামের বড় শত্রু ছিলো, সেদিক দিয়ে যাচ্ছিলো এবং তাঁদের পারস্পরিক হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক দেখে হিংসায় জ্বলে উঠলো। আর বলতে লাগলো, “এসব লোক পরস্পর এভাবে মিলে গেলে আমাদের ঠিকানা কোথায়?” (তখন সে) একজন যুবককে নিয়োগ করলো যেন সে তাঁদের মজলিসে বসে তাঁদের পূর্ববর্তী যুদ্ধ-বিগ্রহের কথার অবতারণা করে এবং সে যুগে প্রত্যেক গোত্র, যারা আপন গুণগান এবং প্রতিপক্ষের কুৎসা ও হীনতার যেসব শ্লোক (কবিতা) লিখতো, সেগুলো যেন আবৃত্তি করে।

সুতরাং সেই ইহুদী যুবক অনুরূপই করলো এবং তার এ উস্কানীমূলক কর্মকান্ডের ফলে উভয় গোত্রের লোকেরা ক্রোধান্বিত হলো এবং অস্ত্রধারণ করলো। রক্তপাত হবার উপক্রম হলো। 

বিশ্বকুল সরদার صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এ খবর পেয়ে মুহাজির সাহাবা কিরামকে সঙ্গে নিয়ে তাশরীফ আনলেন এবং ইরশাদ করলেন, “হে মুসলমান জামা‘আত! এ

 কি ধরণের জাহেলী যুগের কার্যকলাপ? স্বয়ং আমি তোমাদের মধ্যে আছি। আল্লাহ্ تَعَالٰی তোমাদেরকে ইসলামের সম্মান দিয়েছেন, জাহেলিয়াতের বালা থেকে নাজাত দিয়েছেন। তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি সৃষ্টি করেছেন। তোমরা কি আবার কুফরী যুগের অবস্থার দিকে ফিরে যাচ্ছো?” 

হুযূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর ইরশাদ তাঁদের অন্তরকে প্রভাবিত করলো। আর তাঁরা বুঝতে পারলেন যে, এটা শয়তানেরই ধোকা এবং শত্রুরই চক্রান্ত ছিলো। তাঁরা হাত থেকে হাতিয়ার নিক্ষেপ করলেন এবং ক্রন্দনরত অবস্থায় একে অপরকে জড়িয়ে ধরলেন আর হুযূর صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর সাথে অনুগত বেশে চলে আসলেন। তাঁদের সম্পর্কে এ 

আয়াত নাযিল হয়েছে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ